পরিবারের ৭ সদস্য নিহত, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল ৬ মাসের এক শিশু

 পরিবারের ৭ সদস্য নিহত, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল ৬ মাসের এক শিশু

সে জানে না তার মা আর নেই। মেয়েকে নিয়ে বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তার মা। একসঙ্গে পরিবারের ৭ সদস্যকে হারিয়েছে সে।

শনিবার (২২ জুন) দুপুরে বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মাঝামাঝি হলদিয়া ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে সাবরিনের মা রাইতি খানসহ ৯ জন নিহত হন।

বেঁচে যাওয়া শিশু সাবরিনের বাবা সোহেল খান জানান, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসে ছিল সাবরিন ও তার মা রাইতি। লোহার সেতু ভেঙে মাইক্রোবাসটি যখন নদীতে ডুবে যাচ্ছিল, তখন রাইতি কোল থেকে সাবরিনকে খালের ওপর ভাসমান কচুরিপানার মধ্যে ফেলে দেন। পেছনে একটি অটোরিকশায় সোহেলসহ দুইজন আত্মীয় ছিলেন। তারাও পানিতে ডুবে যাচ্ছিলেন। সোহেল কোনোভাবে সাঁতরে ওপরে উঠে আসতেই কচুরিপানার ওপর তার চোখ পড়ল। তিনি দেখেন কচুরিপানার ওপর সাবরিন। সাথে সাথে নিজের সন্তানকে পানিতে ভাসমান কচুরিপানার ওপর থেকে উদ্ধার করেন তিনি।
সোহেল খান আরও বলেন, "এভাবে আমার সবকিছু কেড়ে নিল আল্লাহ! ছোট মেয়েটাকে নিয়ে আমি এখন কীভাবে বাঁচব?"

জানা যায়, কনে বাড়ি আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন থেকে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের ছেলে বাড়িতে বউভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশায় যাচ্ছিলেন কনে পক্ষের লোকজন। এ সময় উপজেলার ৫নং চাওড়া ইউনিয়ন এবং ৪নং হলদিয়া ইউনিয়নের সংযোগ সেতু হলদিয়া ব্রিজ ভেঙে একটি মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা নদীতে পড়ে যায়। এতে মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা দুই শিশুসহ নয় নারী নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন রুবিয়া (৪৫), রাইতি (২২), ফাতেমা (৫৫), জাকিয়া (৩৫), রুকাইয়াত ইসলাম (৪), তাহিয়া মেহজাবিন আজাদ (৭), তাসফিয়া (১৪), ঋধি (৪) ও রুবি বেগম (৩৫)। এদের মধ্যে রুকাইয়াত ইসলাম ও জাকিয়ার বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামে। অপর নিহত ৭ জনের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কোকরার চর গ্রামের বাসিন্দা। এরা কনে হুমায়রার মামা বাড়ির আত্মীয়স্বজন।

জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান বলেন, "শুক্রবার আমরা ভাগনি হুমায়রা বেগমের বাড়ি হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে যাই। সেখান থেকে একটি মাইক্রোবাস যোগে শনিবার (২২ জুন) দুপুর ১টার সময় ভাগনি জামাইয়ের আমতলীর বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রওনা করি। দুপুর আনুমানিক দুইটার দিকে হলদিয়া বাজার সংলগ্ন একটি লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাইক্রোটি মাঝ বরাবর আসার পর আকস্মিক সেতুটির ২০ ফুট ধরে ধসে মাইক্রোবাসসহ কচুরি পানায় ভর্তি খালে পড়ে যায়। এরপর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়েছে, কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে।"
ss s
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, "ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস নদীতে ডুবে বিয়ের কনে পক্ষের ৯ জন মারা গেছে। নিহতদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।"

আমতলী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ভেঙে পড়া ব্রিজ সম্পর্কে জানান, "হালকা যান (ফুটওভার ব্রিজ) প্রকল্পের আওতায় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৮৫ মিটার এই লোহার সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ বছর আগে নির্মিত সেতুটিতে চলাচলে সতর্কতা নোটিশ টাঙানো ছিল। সেতুটির দুই প্রান্তেই গাছে সতর্কীকরণ নোটিশ টাঙানো ছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ।’ সেটি উপেক্ষা করার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।"

Post a Comment

0 Comments