প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছে আবেদ আলী ও তার চক্র।

 প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছে আবেদ আলী ও তার চক্র।

বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের চার সন্তানের মধ্যে মেজো ছেলে সৈয়দ আবেদ আলী। অভাবের সংসারে অর্থের জোগান দিতে মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করতেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে আসেন। সেখানে ফুটপাথে শুয়ে বসে দিন কাটতো। খাবারের টাকার জন্য শুরু করেন কুলির কাজ। পরে রিকশা চালানো, হোটেল শ্রমিকসহ নানা কাজ করেন। একসময় গাড়ি চালানো শিখে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) চাকরি পান। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
পিএসসি’র সাবেক এক চেয়ারম্যানের গাড়ি চালানোর দায়িত্ব পাওয়ার পর তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং সিন্ডিকেট তৈরি করেন। চক্রটি পিএসসি’র ৩৩ থেকে ৪৫তম বিসিএসের প্রশ্নফাঁস করে। এছাড়া তারা নন-ক্যাডার পদের পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস করে। প্রশ্নফাঁস করে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। চক্রটির প্রধান ছিলেন আবেদ আলী, যিনি এককভাবে শতকোটি টাকার মালিক হন। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা দিয়ে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, খামার, বাগানবাড়ি, বিদেশে অর্থ পাচার, বাড়ি নির্মাণসহ বিপুল সম্পদের মালিক হন। পিএসসিতে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করা আবেদ আলী এখন নিজের কয়েকজন গাড়িচালক রেখেছেন। উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন এবং তার অনেক ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে দান-খয়রাত করে নিজেকে দানবীর হিসেবে প্রমাণ করতেন। তার অবৈধ টাকার গরমে বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম বিলাসী জীবনযাপন করতেন। টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদবি বাগিয়ে নিয়েছেন।
ss s
তবে পিএসসির তিনটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর সোমবার আবেদ আলী ও তার ছেলে সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তাদের মধ্যে ছয়জন আদালতে নিজেদের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আবেদ আলী প্রশ্নফাঁস করে অন্তত শতকোটি টাকা কামিয়েছেন। অবৈধ টাকায় ঢাকার মিরপুর ও উত্তরায় দুটি বহুতল বাড়ি, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাতটি ফ্ল্যাট, তিনটি প্লট, দামি গাড়ি, বিলাসবহুল গ্রামীণ বাড়ি, মসজিদ, ডেইরি ফার্ম, বাগানবাড়ি, এবং সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট তৈরি করেছেন। অবৈধ টাকা দিয়ে গ্রুপ অব কোম্পানি এবং রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স কোম্পানি খুলেছেন। এখন তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।

গ্রেপ্তারের পর আবেদ আলী সিআইডিকে এসব সম্পদের কথা বলেছেন, তবে ধারণা করা হয় তার আরও অনেক সম্পদ রয়েছে। তার চক্রের অন্যান্য সদস্যরাও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

পিএসসি সূত্রে জানা যায়, আবেদ আলী পিএসসিতে চাকরি নিয়েছিলেন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে। তার বাড়ি মাদারীপুরে হলেও তিনি ঠিকানা দিয়েছিলেন সিরাজগঞ্জের। ২০১৪ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে পিএসসির চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত নিজ এলাকায় যাতায়াত শুরু করেন এবং নতুন উপজেলা ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে প্রচার চালান।

আবেদ আলীর বড় ছেলে সিয়াম শিলিগুড়ির একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এবং সেখানেও একটি বাড়ি কিনেছেন আবেদ। দেশে ফিরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন এবং একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন। ছাত্রলীগের তিনটি ইউনিটের পদও বাগিয়ে নিয়েছেন সিয়াম। যদিও গ্রেপ্তারের পর ছাত্রলীগ তাকে বহিষ্কার করেছে।

এদিকে, পিএসসি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ১৭ জনসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে সিআইডি। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। 
ss s
এজাহারে বলা হয়, সংঘবদ্ধ এই চক্রটি পিএসসি’র সাবেক পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়সহ বিভিন্ন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে এবং অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ও উত্তর বিতরণ করতো। সিআইডির তদন্তে জানা যায়, আসামিরা বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন বিসিএসসহ পিএসসির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। 

আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৪ই সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন। এর আগে আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।


Post a Comment

0 Comments