ভারতের সাথে বাংলাদেশের ১০টি সমঝোতা চুক্তি: জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

 ভারতের সাথে বাংলাদেশের ১০টি সমঝোতা চুক্তি: জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশকে না দিয়ে বরং তারা ঐসব নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শুকিয়ে মারছে এবং বর্ষা মৌসুমে ডুবিয়ে মারছে। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেট ও রংপুর অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্যায় উঠতি ফসল ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এভাবে প্রতিবছরই হাজার হাজার কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ ভারতের পানি আগ্রাসনে প্রতিবছরই অর্থনৈতিকভাবে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। ভারতের এ পানি আগ্রাসনের মোকাবেলা করার জন্য গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সকল অভিন্ন নদীগুলোর ওপর ভারতের ভাটিতে ও বাংলাদেশের উজানে বাঁধ নির্মাণ এবং ভরাট হওয়া নদীগুলো খনন করার জন্য বড় ধরনের মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

সাবেক এই এমপি বলেন, আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী তার ভারত সফরকালে ভারতকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে রাজশাহী পর্যন্ত রেল যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের মংলা সামুদ্রিক বন্দর, চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর ও চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ইপিজেড নির্মাণের চুক্তিতে সই করা হয়েছে। দেশের জনগণ মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রীর এসব পদক্ষেপের ফলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে পড়েছে। সরকার বলছে যে, পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী পর্যন্ত রেল চলাচলের চুক্তি করা হয়েছে। আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ১৯৭৫ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী মাত্র ৪৫ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালুর অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু ভারতের সেই ৪৫ দিনের মেয়াদ আজও শেষ হয়নি। কাজেই রাজশাহী পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে রেল যোগাযোগ চালুর যে কথা বলছে সে ব্যাপারে দেশবাসী মনে করে যে, পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী পর্যন্ত রেল চালুর কথাটা একটি ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। হয়ত তাদের এ পরীক্ষামূলক রেল যোগাযোগের মেয়াদও কখনো শেষ হবে না। তাই বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ সরকারের ওই সমঝোতা স্মারক মানতে রাজী নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে রেল চলবে তাতে কি জিনিস বহন করা হবে তা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। সেটা যাত্রীবাহী না মালবাহী ট্রেন তা উল্লেখ করা হয়নি। ওই ট্রেনে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও সামরিক সরঞ্জাম বহন করা হবে কিনা তাও পরিষ্কার করে বলা হয়নি। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ভারতের ৭টি রাজ্যের ওপারে জনগণকে ধ্বংস করার জন্য, গণহত্যা চালানোর জন্য যদি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সামরিক সরঞ্জামসহ ভারতীয় সামরিক বাহিনী ওই ৭টি রাজ্যে সামরিক অভিযান চালায়, তা হবে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাতে ভারতীয় ট্রেনে ভারতের ৭টি রাজ্যের জনগন হামলার শিকার হয়ে বাংলাদেশ রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই এ ধরনের বিপজ্জনক পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেছেন যে, ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিলে ক্ষতি কি? আমরা তার কাছে পাল্টা প্রশ্ন করতে চাই যে, ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিলে বাংলাদেশের লাভ কি? বাংলাদেশের কোনো লাভের কথাই তিনি প্রমাণ করতে পারবেন না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেগুলোর মধ্যকার ট্রানজিট ও করিডোরের কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ব্যাপারে ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের উদাহরণ মোটেই প্রযোজ্য নয়। কারণ ভারত ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীর মতো কোনো নদী ইউরোপে নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশের একই মুদ্রা, একই ধর্ম, একই ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মুক্তবাজার অর্থনীতি। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ইউরোপের সকল দেশ একই ধরনের। ওইসব দেশে উন্নতমানের বহু দলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার চালু আছে। ওই সব দেশের অধিবাসীদের অন্য দেশের বর্ডার গার্ড পাখির মতোগুলি করে মানুষ হত্যা করে না। কোনো দেশের বর্ডারে কাঁটা তারের বেড়াও নেই। অথচ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলাদা আলাদা মুদ্রা চালু, দু’দেশের মানুষের ধর্ম, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ভাষা আলাদা। মুদ্রার মানের মধ্যে রয়েছে বিরাট ব্যবধান। দুই দেশের মধ্যে কাঁটা তারের বেড়া রয়েছে। ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশী মানুষকে পাখির মতোগুলি করে হত্যা করছে। বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিবাদ ও প্রতিকার করছে না। বাংলাদেশের বিজিবি কখনো ভারতীয়দের হত্যা করে না। বাংলাদেশে এখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে। ভারতেও নরেন্দ্র মোদির উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসলাম বিদ্বেষী শাসন চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিয়ে তার সাথে ইউরোপী ইউনিয়নের তুলনা করতে গিয়ে মূলত বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীসভার সদস্যরা ভারতকে করিডোর এবং ট্রানজিট দেয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন যে, ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিয়ে চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহার করতে দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের মতো উন্নত দেশ হবে। কিন্তু দেশের মানুষ ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবহার করতে দিয়ে বাংলাদেশের সামান্যতম কোনো উন্নতি হয়নি, বরং শ্রীলঙ্কার মত একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে।
sss
জামায়াতের এই নেতা বলেন, সরকার ঋণ নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। চারদিকে শুধু নেই আর নেই আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবহার করতে দিয়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে প্রতি বছর কত টাকা শুল্ক ও মাশুল আদায় করছে বা আয় করছে, তা আজ পর্যন্ত সরকার জাতির সামনে প্রকাশ করেনি। ট্রানজিট ও করিডোর দিয়ে বাংলাদেশের কোনো লাভ হয়নি বরং ক্ষতিই হয়েছে।

সাবেক এই এমপি বলেন, আমরা সবাই জানি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে ভারতের কাছে থেকে উন্নতমানের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য চুক্তি করেছে। আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের তিন দিক দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড বাংলাদেশকে বেষ্টন করে আছে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বিভিন্ন সমস্যা বিরাজমান। সুতরাং বাংলাদেশের ওপর যদি কোনো দেশ থেকে আঘাত আসে, তাহলে তা ভারতের দিক থেকেই আসার আশঙ্কা রয়েছে। সেই ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশের প্রশিক্ষণ গ্রহণ কী বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী না আনুকূল সে বিষয়টি অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণকে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী, গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব ভারতীয়দের ওপর অর্পণ করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীকে ভারতের মুখাপেক্ষী ও অনুগত বাহিনীতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দেশবাসী মনে করে। ভারতীয় প্রশিক্ষণের নাম করে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর মগজ ধোলাই করে তাদের ভারতের সেবাদাসে পরিণত করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এটা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর মারাত্মক আঘাতেরই শামিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত ও রাশিয়া থেকে অস্ত্র ক্রয় করার কথাও বলেছেন। সরকারের এ ধরনের রহস্যজনক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের জনগণ শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিয়ে যাদেরকে নির্বাচিত করবে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকারী। বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এ সরকারের কোনো অধিকার নেই জনগণের ও দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কোনো চুক্তি সম্পন্ন করার। বাংলাদেশের জনগণ এ অনির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল সমঝোতা স্মারক, ঘোষণা এবং চুক্তি প্রত্যাখ্যান করছে। বর্তমান অবৈধ সরকারেরে বেআইনি, অগণতান্ত্রিক ও দেশের স্বার্থবিরোধী এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমরা দেশেবাসীর প্রতি আহ্ব


Post a Comment

0 Comments