‘এত মানুষের আহত অবস্থা একসঙ্গে আগে কখনো টানতে হয়নি।’
প্রায় ১৫ বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্স চালান জমির (ছদ্মনাম)। এই সময়ে হাজারো রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনো হননি। ওই দুই দিনে তাকে এত রোগী নিয়ে যেতে হয়েছে, যা করোনার মহামারী সময়েও হয়নি।
গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জমিরের সাথে কথা হয় বণিক বার্তার। তিনি বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা কঠিন। যেকোনো দুর্যোগে মানুষ আহত হলে আমরা অ্যাম্বুলেন্স চালকরা এগিয়ে আসি। করোনার সময়ও আমরা তৎপর ছিলাম। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত, আগুনে পুড়ে যাওয়া, ভবন ধসে আহত মানুষদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসেছি। কিন্তু ১৮ ও ১৯ জুলাই এত মানুষকে হাসপাতালে আনতে হয়েছে এবং এত অমানবিক দৃশ্য দেখেছি, যা আমার জীবনে প্রথম।’
জমির আরও বলেন, ‘আমি যাদের এনেছি, তাদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লেগে আছে, রক্তাক্ত, যন্ত্রণায় কাতর—এমন অনেক মানুষ এনেছি। এ সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে। ১৫ বছর অ্যাম্বুলেন্স চালানোর অভিজ্ঞতায়, ১৭ জুলাইয়ের পর এত মানুষ একসঙ্গে আনতে হয়নি।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের সামনে আরেক অ্যাম্বুলেন্সচালকের সাথে কথা হয় বণিক বার্তার। তিনি জানান, ‘রাত-দিন ভুলে গেছি। ঘুমের অভাব চরমে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন পাচ্ছি আর আহত মানুষ নিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় আছি, গুলিবিদ্ধ হোক কিংবা অন্য কিছু, আবেগ কাজ করে না। তবে ১৫ জুলাই মেডিকেলে ঢুকে দেখেছি অনেককে মারছে, সেটা খুব খারাপ লেগেছে।’
kkk
আরেক অ্যাম্বুলেন্সচালকের সহকারী জানান, ‘ঢাকা মেডিকেল এলাকায় বড় হয়েছি এবং তিন বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্সচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করছি। গত সাত-আট দিনে যা দেখেছি, তার বর্ণনা দেওয়া কঠিন। এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে ডাক্তাররা আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে সেবা দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ২০০-২৫০ অ্যাম্বুলেন্স আছে, তাই অ্যাম্বুলেন্স সংকট সাধারণত হয় না। কিন্তু ১৮ ও ১৯ জুলাই এখানে অ্যাম্বুলেন্স সংকট দেখা দেয়। রোগীর স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছিলেন না। দূরের যাত্রীরা স্বাভাবিক দামের তিনগুণ বেশি দিতে চাইলেও অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। অনেকেই বাধ্য হয়ে সিএনজি কিংবা অন্য গাড়িতে গন্তব্যে পৌঁছেছেন, তবে দূরের যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।’
0 Comments