"অনেক মন্ত্রী ও এমপিরা আত্মগোপনে চলে গিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন।"

 "অনেক মন্ত্রী ও এমপিরা আত্মগোপনে চলে গিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন।"


নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর হাসিনা সরকারের পতনের পর তার মন্ত্রিসভার প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু মন্ত্রী দেশ ছেড়ে গেছেন, এবং যারা দেশ ত্যাগ করতে পারেননি তারা প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অন্যদিকে, পলায়নপর মন্ত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সেনা হেফাজতে ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন এবং কিছু মন্ত্রিসভার সদস্য নিরাপত্তা চেয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। মন্ত্রী-এমপিদের দেশত্যাগ ঠেকাতে দেশের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সোমবার ভোর থেকে বেশ কিছু প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না এবং তাদের মুঠোফোন বন্ধ ছিল। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। হাসিনা সরকারের ক্ষমতাধর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও অজ্ঞাত গন্তব্যে চলে যান।

কয়েকজন মন্ত্রী জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পরপরই দেশ ছেড়ে গেছেন এবং পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দেশে ফিরতে নিরাপদ মনে করেননি। রোববার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের পরিবার ইকে ৫৮৬ নম্বর ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করে এবং তাদের গন্তব্য ছিল দুবাই বিমানবন্দর। পরবর্তীতে মন্ত্রী-এমপিদের দেশ ত্যাগের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

কিছু মন্ত্রী শেষ মুহূর্তে টিকিটের জন্য চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি। রোববার ও সোমবার তারা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিন্তু বিফল হন। কিছু মন্ত্রী পরিবারের সদস্যদের বিদেশে পাঠাতে সক্ষম হলেও নিজেরা যেতে পারেননি। এদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সোমবার বিকাল পর্যন্ত বনানীর বাসায় অবস্থান করছিলেন এবং সন্ধ্যার পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।


রোববার মন্ত্রী-এমপি ও সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা বিশেষ প্রটোকল চেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এভসেকের সহকারী পরিচালক নাছিমা শাহীন স্বাক্ষরিত তালিকায় উল্লেখিত মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে রয়েছেন পূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

এছাড়া দেশ ছেড়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী, বিচারপতি ও উচ্চপদস্থ আমলা, যেমন সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম।

মন্ত্রীদের সঙ্গে বিপদে পড়েছেন তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারাও। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা মনির হোসেন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়, তবে গুজব বলে দাবী করেন তার ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফ মাহমুদ অপু পালিয়ে গেছেন।

ff f

রোববার রাত থেকেই মন্ত্রী-এমপিদের দেশত্যাগের খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকজনের ফ্লাইট নম্বর ও বিমানের ভেতরে বসে থাকার ছবি প্রকাশিত হয়। সরকারের ভেতরের পরিস্থিতি এতদিন অজানা থাকলেও, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। 

অন্যদিকে, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সরকারের পতনের পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন। তার চাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান ওরফে মিতা সপরিবারে দেশ ছাড়তে গিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছালেও বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণার কারণে ফিরে আসতে বাধ্য হন। পরে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। সন্দ্বীপবাসী তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং স্থানীয় এনাম নাহার তার অবৈধ সম্পদ দখলে নেয়।

Post a Comment

0 Comments