সূরা ফাতিহার ফজিলতসমূহ

 সূরা ফাতিহার ফজিলতসমূহ  


আল কুরআন আল্লাহর মহিমান্বিত গ্রন্থ, যা মানুষের সফলতার পথ নির্দেশ করে। এই গ্রন্থ অনুসরণ করলে মানুষ সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারে, আর অবহেলা করলে ব্যর্থতার গভীরতায় ডুবে যেতে পারে। এই মহাগ্রন্থের সূচনায় রয়েছে সূরা ফাতিহা, যা কুরআনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা এবং নামাজের সূচনায় পাঠ করা হয়। কুরআন ও হাদিসে সূরা ফাতিহার যে ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে, তা অন্য কোনো সূরার ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়নি।


সূরা ফাতিহা এমন একটি মহান সূরা যার মধ্যে কুরআনের পুরো সারমর্ম তুলে ধরা হয়েছে। সাহাবি সাঈদ ইবনে মুয়াল্লা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন নবীজি (সা.) তাকে বললেন, “মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগেই আমি কি তোমাকে এমন একটি সূরা শিখাবো না, যা কুরআনের মধ্যে সর্বাধিক মহান?” তারপর নবীজি (সা.) তার হাত ধরলেন এবং মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বললেন, "হ্যাঁ, সেটি হলো ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ (সূরা ফাতিহা)।” (বুখারি-৪৪৭৪)


**আল কুরআনের সর্বোত্তম সূরা:** সূরা ফাতিহা কুরআনের সর্বোত্তম সূরা হিসেবে বিবেচিত। সাহাবি আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) একবার একটি স্থানে বসেছিলেন। তিনি বললেন, “আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বোত্তম সূরা সম্পর্কে জানাবো?” তারপর বললেন, “সেটি হলো ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’।” (আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইলাতি-৭২৩)


**তুলনাহীন সূরা:** সাহাবি আবু যর (রা.) বলেন, এক রাতের আঁধারে নবীজি (সা.)-র সাথে মদিনার একটি গলিতে ছিলেন, তখন এক ব্যক্তি সূরা ফাতিহা দিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছিলেন। নবীজি (সা.) তা শুনলেন এবং বললেন, "পুরো কুরআনে এর সমতুল্য কোনো সূরা নেই।” (মুজামুল আওসাত-২৮৬৬)


**সূরা ফাতিহার অতুলনীয়তা:** সূরা ফাতিহা এমন একটি সূরা, যার তুলনা কোনো অন্য সূরার সাথে করা যায় না, এমনকি তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল, বা কুরআনেও তার সমতুল্য কিছু নেই। সাহাবি উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, “তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল, এমনকি কুরআনেও সূরা ফাতিহার মতো কোনো সূরা অবতীর্ণ হয়নি।” (নাসায়ি-৯১৪)


**আরশে আজিমের ধনভাণ্ডার:** সাহাবি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ আমাকে এমন একটি জিনিস দিয়েছেন যার দ্বারা তিনি আমার ওপর গর্ববোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাকে ফাতেহাতুল কিতাব দিয়েছি, যা আমার আরশে আজিমের ধনভাণ্ডার। আমি তা তোমার ও আমার মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত করেছি।’” (ফাজায়েলুল কুরআন-১১৮)


**অপরিসীম ফজিলত:** ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, সূরা ফাতিহা আল্লাহ তায়ালাকে একান্তভাবে আহ্বান করার সূরা। এ জন্য নামাজকে এই সূরার সাথে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, কেননা নামাজী ব্যক্তি তার রবকে একান্তভাবে ডাকেন। আর বান্দা সর্বোত্তম কালাম দিয়েই তার রবকে আহ্বান করে থাকেন। এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে দু’ভাগে বিভক্ত। (তাফসিরু সূরাতিল ফাতিহা লি-ইবনে রজব-৪০)

ff f

**সর্বরোগের মহৌষধ:** সূরা ফাতিহা সর্বরোগের মহৌষধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি অন্তরের রোগের চিকিৎসায় যেমন কার্যকরী, তেমনি শারীরিক রোগ থেকেও মুক্তি দেয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, “ফাতেহাতুল কিতাব মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের মহৌষধ।” যেমন কুরআনে এসেছে, "হে লোকসকল! তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের কাছ থেকে উপদেশ এসেছে, অন্তরসমূহে যা আছে তার আরোগ্য এবং মোমেনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।” (সূরা ইউনুস-৫৭)


**মানুষ ও জিন শয়তান থেকে রক্ষাকারী:** সূরা ফাতিহার আমল মানুষকে জাদুটোনা থেকে মুক্তি দেয় এবং মানুষ ও জিন শয়তান থেকে রক্ষা করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে স্বীয় বিছানায় রেখে বিসমিল্লাহ এবং সূরা ফাতিহা পাঠ করে, সে জিন শয়তান ও মানুষ শয়তানের সকল অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে।” (আল মুজামুল আওসাত-৪৫৯৪)


**পূর্ববর্তী কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি:** মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বে যত নবী এসেছেন, তাদের কাউকে সূরা ফাতিহার মতো মর্যাদাপূর্ণ সূরা দেওয়া হয়নি। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন জিবরাইল (আ.) নবীজির পাশে বসা ছিলেন, তখন আকাশের একটি দরজা খোলা হয়েছিল যা আগে কখনো খোলা হয়নি। ফেরেশতারা অবতরণ করলেন এবং বললেন, "এই ফেরেশতারা আজকেই প্রথম দুনিয়ায় অবতরণ করেছেন। (হে নবী) আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা কেবল আপনাকে দেওয়া হয়েছে, অন্য কোনো নবীকে তা দেওয়া হয়নি। তা হচ্ছে, সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষাংশ।” (মুসলিম-২৫৪)

Post a Comment

0 Comments