"ঘরও গেল, খামারও গেল, সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।"

 "ঘরও গেল, খামারও গেল, সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।"


ফেনী সদরের খাইয়ারা এলাকার রাস্তার মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর কয়েক শ মুরগির বাচ্চা নিয়ে বসে ছিলেন খামারি মোহাম্মদ আলম। সেখান থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরত্বে তাঁর খামারটি ছিল, কিন্তু এখন সেটি পানির নিচে।


খামারে ২ হাজার ৮০০ মুরগি ও মুরগির বাচ্চা ছিল। বন্যার পানিতে পাঁচ শতাধিক মুরগি ও বাচ্চা ভেসে গেছে। বাকি মুরগি ও মুরগির বাচ্চাগুলোকে আলম ও তাঁর ছেলে তুলে মহাসড়কের বিভাজকের ওপর এনে রেখেছেন। সেখানেই গতকাল শুক্রবার বিকেলে আলমের সঙ্গে কথা হলো।

বন্যার পানিতে আলম শুধু তাঁর খামারটিই হারাননি, তাঁর বসতঘরও ডুবে গেছে। বাধ্য হয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় এক প্রতিবেশীর বাড়িতে। আকস্মিক বন্যায় আলম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁর চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ঘরটাও গেল, খামারও গেল। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’


আলম বলেন, তাঁর খামারটি অনেক উঁচুতে ছিল, তাই সেখানে পানি উঠে যাবে, এমনটা কখনো ভাবেননি। গত বুধবার ভোরে পানি ওঠে, তখন তিনি খামারে ছিলেন না। বাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পরে বৃহস্পতিবার সকালে খামারে গিয়ে দেখেন, নিচের তাকগুলোতে রাখা মুরগির বাচ্চাগুলো মারা গেছে।


আলমের দুই ছেলে আছে, এবং পরিবারটি তাঁর একার আয়েই চলে। সদরের ফাজিলপুরে তাঁদের বাড়ি। আর্থিক ক্ষতির হিসাব করতে গিয়ে চল্লিশোর্ধ্ব এই খামারি বলেন, মুরগির বাচ্চা প্রতি পিস ৫০ টাকা করে কেনা হয়েছিল। ৬ মাস পর পূর্ণবয়স্ক হলে প্রতিটি ২০০ টাকা করে বিক্রি করা যেত।


এই বিপুল লোকসান কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আলম। তিনি বলেন, ‘ঘরের সব জিনিসপত্র শেষ, খামারও শেষ। অন্যদিকে ঋণের বোঝা মাথায়। কোনো উপায় পাচ্ছি না।’

ff f

গতকাল বিকেলে সদরের লেমুয়া এলাকায় আরেক খামারির সঙ্গে কথা হয়। তাঁর নাম সৈয়দ আলী। তাঁর ছোট খামারের প্রায় হাজারখানেক মুরগি ভেসে গেছে। সৈয়দ আলী বলেন, টিন আর বেড়া দিয়ে খামারটি তৈরি করেছিলেন। তাঁর চোখের সামনেই খামারের ভেতরের কাঠের তাকগুলো ভেঙে পড়েছে।


খামারিদের তথ্য অনুযায়ী, ফেনী সদরে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৩০টি খামার রয়েছে, যেগুলো সবই বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খামারিরা সবাই আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন।


জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা, ও সোনাগাজী—এই ছয়টি উপজেলা পুরোপুরি বন্যাকবলিত। সদর ও সোনাগাজী উপজেলার নতুন নতুন এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ দুর্ভোগে আছেন, এবং অন্তত এক লাখ মানুষ পানিবন্দী। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। মূলত ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে ফেনীতে এই ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।


সরকারি হিসাব অনুযায়ী, উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে দেশের ১১টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments