রেমিট্যান্স আহরণে ট্রাস্ট ব্যাংক দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে।

রেমিট্যান্স আহরণে ট্রাস্ট ব্যাংক দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে।

জুলাই মাসে ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, কিন্তু গত মাসে তা বেড়ে ২৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির রেমিট্যান্স আহরণে ২৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি ট্রাস্ট ব্যাংককে রেমিট্যান্স আহরণে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। এর আগে ব্যাংকটির মাধ্যমে এত বেশি রেমিট্যান্স আসতে দেখা যায়নি।

অন্যদিকে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসত, কিন্তু আগস্টে এই হিস্যা ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। জুলাই মাসে ব্যাংকটির মাধ্যমে ৪৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা আগস্টে কমে ৪০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।



যদিও সামগ্রিকভাবে আগস্ট মাসে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। প্রবাসীরা গত মাসে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)। ২০২৩ সালের আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল মাত্র ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, অর্থাৎ গত মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রায় ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর মাধ্যমে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এনেছে ট্রাস্ট ব্যাংক। ব্র্যাক ব্যাংক ২০ কোটি ৬৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে, আর চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে জনতা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটি ব্যাংকে আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

m mm

বিশ্লেষকরা বলছেন, মালিকানাসংক্রান্ত টানাপোড়েন ও গুলিবর্ষণের ঘটনার কারণে গত মাসে ইসলামী ব্যাংকে অস্থিরতা ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ ও তারল্য সংকটের কারণেও ব্যাংকটি চাহিদা অনুযায়ী অর্থ লেনদেন করতে পারেনি। এর ফলে বড় রেমিট্যান্স হাউজগুলো ব্যাংকটির কাছে রেমিট্যান্সের ডলার বিক্রি কমিয়ে দেয়। ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে যেসব রেমিট্যান্স আসত, তার একটি অংশ ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে চলে গেছে।

ট্রাস্ট ব্যাংকের ট্রেজারি ও এনআরবি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মাসুদ শাহজাহান জানান, 'গত ১১ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ওপর গুলি চালানো হলে, বড় রেমিট্যান্স হাউজগুলো ইসলামী ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি কমিয়ে দেয়। দেশের কয়েকটি ব্যাংকের মধ্যে ট্রাস্ট ব্যাংকের অর্থ লেনদেনের অবকাঠামো শক্তিশালী হওয়ায়, বড় রেমিট্যান্স হাউজগুলো আমাদের কাছে ডলার বিক্রি করতে আগ্রহী ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত দরেই আমরা রেমিট্যান্স কিনেছি।'

m mm

ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ১১ আগস্টের ঘটনার পর এক সপ্তাহ রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও মাসের শেষ দিকে তা স্বাভাবিক হয়ে আসে। পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং আমানতের প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগস্টের প্রথম তিন দিনে দেশে মাত্র ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যায়। ৪ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত প্রবাসীরা ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার পাঠান, ১১ থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আসে ৬৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার, এবং ১৮ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আসে ১০৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার।

রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে। আগস্টে দেশের রিজার্ভের ক্ষয় না হয়ে উল্টো বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৩১ জুলাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (বিপিএম৬) অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২৮ আগস্ট বেড়ে ২০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। জুলাই মাসে রিজার্ভ থেকে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার ক্ষয় হয়েছিল।

mmm

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসীরা আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে ডলারের বিনিময় হার বাড়ানোর কারণে এখন ব্যাংক খাতে প্রতি ডলার ১২০ টাকা দরে লেনদেন হচ্ছে, যার ফলে রিজার্ভের ক্ষয় আপাতত বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে না।
 

Post a Comment

0 Comments