হাসিনার সামনে এখন দুটি বিকল্প রয়েছে: ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া অথবা দেশে ফিরে আসা।

হাসিনার সামনে এখন দুটি বিকল্প রয়েছে: ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া অথবা দেশে ফিরে আসা।


ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে এখন দুটি বিকল্প রয়েছে: ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া অথবা দেশে ফিরে আসা। এই মুহূর্তে তার আর কোনো বিকল্প নেই। ৭৭ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন, যেখানে তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই হত্যা মামলা। গণহত্যার মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। তার পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় অন্য কোনো দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে গেছে। ভারতীয় আইন অনুযায়ী, বিনা ভিসায় তিনি ভারতে ৪৫ দিন থাকতে পারবেন, যার মধ্যে ইতিমধ্যে ২৭ দিন কেটে গেছে।

এই সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনাকে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শেখ রেহানার অবস্থান অবশ্য ভিন্ন। তার কাছে একটি ব্রিটিশ পাসপোর্ট রয়েছে, যার কারণে তিনি ইচ্ছা করলে যুক্তরাজ্য বা অন্য যে কোনো দেশে যেতে পারেন। 


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত কী সিদ্ধান্ত নেবে? তারা কি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে? যেমনটি দিয়েছিল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর। ছয় বছর ধরে হাসিনা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আশ্রিত ছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে, ভারত একটি উভয় সংকটে রয়েছে। তারা কি তাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও তিক্ত সম্পর্ক তৈরি করবে? বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রবল, এবং আন্তর্জাতিক মহলেও ভারতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।


৩৬ দিনের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে ভারত বাংলাদেশের ওপর বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ করেছে, যার মধ্যে সংখ্যালঘু ইস্যুটি ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ দলমত নির্বিশেষে হিন্দুদের বাড়িঘর রক্ষা করেছে, যা প্রমাণ করেছে যে ঢালাও অভিযোগগুলো মিথ্যা। এ অবস্থায় ভারত কি শেখ হাসিনাকে রক্ষা করবে? তার পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় এখন তিনি কার্যত উদ্বাস্তু। অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টাও অত্যন্ত কঠিন।


চীন এবং ভারত উভয়েই হাসিনাকে নিয়ে বাজি ধরেছিল, কিন্তু তারা উভয়েই ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারত এখনও হাসিনাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে, যদিও ইতিহাস অন্য কিছু বলে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর, ধারণা করা হয়েছিল যে ভারত ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাবে, কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি।

ff f

বর্তমানে, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারত কি আসলেই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, যা থেকে ধারণা করা যায় তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়? বাস্তব পরিস্থিতি দেখে যে কেউ এই অনুমান করতে পারেন। ভারত যেটুকু সুবিধা পেয়েছে শেখ হাসিনার কাছ থেকে, সেটুকু ধরে রাখতে চায়, কিন্তু একই সঙ্গে তারা হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও পিছপা নয়। বিগত ১৫ বছরে ভারত অনেক সুবিধা নিয়েছে এবং সামান্য দিয়েছে, কিন্তু নির্বাচনের প্রভাব বজায় রেখেছে। এখন, যদি হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চান, তখন ভারত সরকারের নীতি কী হবে তা নিয়ে তারা দোটানায় রয়েছে।


ভারতের উদ্বেগ মূলত সেভেন সিস্টার অঞ্চল নিয়ে। হাসিনার শাসনামলে এই এলাকায় স্থিতি এসেছে, কিন্তু যেকোনো বিপ্লবে এই অর্জন হারিয়ে যেতে পারে। ভারত আরও শঙ্কিত যে, হাসিনাকে আশ্রয় দিলে চীন এতে সুবিধা নিতে পারে। এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান মজবুত করেছে। ঢাকার ক্ষমতায় এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস রয়েছেন, যিনি বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পারেন। এই কারণে, ভারত সাবধানে পা ফেলছে।


বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসিনার দেশে ফেরা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হলে তাকে কোনো গণতান্ত্রিক দেশ আশ্রয় দেবে না। সময় যত গড়াচ্ছে, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মনোভাবেও পরিবর্তন আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক নেই; বাংলাদেশের সঙ্গে যা কিছু ছিল, ভুল নীতি গ্রহণ করে তা হারাতে চায় না ভারত। 


সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশিদের প্রতিক্রিয়া দেখে ভারতের নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন। উত্তরে চীন, পশ্চিমে পাকিস্তান, আর পূর্বে একটি নতুন নিরাপত্তা ফ্রন্ট খোলার ঝুঁকি নিতে চায় না ভারত। কারণ, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের গভীর নজর রয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ওপর। 


**সংক্ষেপে,** শেখ হাসিনার সামনে এখন ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় বা দেশে ফিরে আসা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই, আর ভারত কী করবে তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে।

Post a Comment

0 Comments