সংস্কার নিয়ে বিএনপির অবস্থান কি জামায়াতকে শক্তিশালী করছে
বিএনপির (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) সংস্কার-সংক্রান্ত বর্তমান অবস্থান জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক সংস্কার নিয়ে বিএনপির কিছু আপত্তি এবং দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণে জামায়াত নিজেকে 'সংস্কারপন্থী' শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছে, যা তাদের রাজনৈতিক বৈধতা ও প্রভাব বাড়াতে সহায়ক হতে পারে ।
বিএনপির সংস্কার-সংক্রান্ত অবস্থান:
সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৬৯১টি প্রস্তাবের মধ্যে বিএনপি প্রায় ৬০০টির বেশি প্রস্তাবে একমত হয়েছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলটির আপত্তি রয়েছে, যেমন:
-
প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধানের পদে একই ব্যক্তি থাকা নিয়ে আপত্তি।
-
কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না—এই প্রস্তাবের বিরোধিতা।
-
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরোধিতা ।
এই আপত্তিগুলোর ফলে বিএনপিকে 'সংস্কারবিরোধী' হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা
দলটির জন্য রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর হতে পারে।
জামায়াতের অবস্থান ও সম্ভাব্য লাভ:
জামায়াতে ইসলামী সংস্কারপন্থী অবস্থান গ্রহণ করে নিজেকে 'সংস্কারপন্থী' শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছে। তারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি এবং আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে । এই অবস্থান তাদের রাজনৈতিক বৈধতা ও প্রভাব বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
বিএনপি যদি সংস্কার প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে জামায়াতের রাজনৈতিক উত্থান এবং বিএনপির দুর্বলতা—এই দুইটি ফলাফল একসঙ্গে ঘটতে পারে। এটি বিএনপির জন্য রাজনৈতিকভাবে বিপর্যয়কর হতে পারে, বিশেষ করে তরুণ ও মধ্যপন্থী ভোটারদের কাছে ।
বিএনপির জন্য এখনই সময় তাদের সংস্কার-সংক্রান্ত অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার। সংবিধান সংশোধন, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা এবং নারীর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব—এই তিনটি মূল সংস্কার গ্রহণ করে তারা নিজেদের 'সংস্কার-নায়ক' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এটি তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে এবং জামায়াতের উত্থান রোধে সহায়ক হবে ।
0 Comments