ইসলামী ধারার ব্যাংক অনিয়ম-দুর্নীতিতে সায় ছিল কি শরিয়াহ বোর্ডের?
“আমানতের হেফাজত করা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আমানতদারিতা বলতে বোঝায় entrusted অর্থ বা অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে রক্ষা করা এবং পরে তা প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।
ইসলামী ব্যাংকিংও এই মূলমন্ত্রের উপর তৈরি। তবে দেশের শরিয়াহ-ভিত্তিক বেশিরভাগ ব্যাংকে গ্রাহকের আমানতের অর্থ ‘খেয়ানত’ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যুগপৎ অনিয়ম-দুর্নীতিতে, এগুলোর শরিয়াহ বোর্ডেরও সায় ছিল বলেও দাবি করা হচ্ছে।
শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি (যে কমিটিকে সাধারণত “শরিয়াহ বোর্ড” বলা হয়) ইসলামী ব্যাংকের নীতিনির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করে। মূল দায়িত্ব হলো — ইসলামী নীতির আলোকে ব্যাংক পরিচালনা নিশ্চিত করা, শরিয়াহ-সম্মত ব্যাংকিং সংস্কৃতি গড়া, এবং শরিয়াহ লঙ্ঘন থেকে ব্যাংককে রক্ষা করা। কিন্তু ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডের সদস্যরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। কোথাও কোথাও তাঁদের কেউ কেউ অনিয়মের সঙ্গী হয়েছেন। যেমন, সভার সম্মানীর কথা থাকলেও অনেক-বেশি গ্রহণ করেছেন। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত ইসলামী ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন হলেও, শরিয়াহ বোর্ড অপরিবর্তিত ছিল বা যথেষ্ট পরিবর্তন হয়নি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
f ff
দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত এমন ছয়টি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব ব্যাংক হলো — First Security Islami Bank, Social Islami Bank, EXIM Bank (Islami), Global Islami Bank, Union Bank এবং Islami Bank Bangladesh PLC। এই ব্যাংকগুলোতে ঘুরে-ফিরে প্রায় ১০ জন ব্যক্তি শরিয়াহ বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করেছেন। বিশেষভাবে বলা হচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দীন তালুকদার ছিলেন এসব ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে — যেমন চেয়ারম্যান বা সদস্য।
শরিয়াহ বোর্ডের অন্যান্য প্রভাবশালী সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন — মুফতি সাঈদ আহমেদ মুজাদ্দিদী, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মৌজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মুফতি মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী, ও অধ্যাপক ড. আবু নোমান মো. রফিক রহমান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন — ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর বিপর্যয়ের জন্য শরিয়াহ বোর্ডের সদস্যদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। অন্যথায় ভবিষ্যতে একই ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি পুনরায় ঘটতে পারে। তবে শরিয়াহ বোর্ডের সদস্যরা একমত নন — তাদের দাবি দেশীয় রীতিতে এই বোর্ডের হাতে তেমন কোনো বাস্তব ক্ষমতা নেই। তাদের মতে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যেসব তথ্য উপস্থাপন করে, তারা কেবল ‘ফতোয়া’ দেয়ার অধিকারী।
0 Comments