অভিযুক্তরা দেশ ছাড়লে ‘জেগে ওঠে’ দুদক!

 অভিযুক্তরা দেশ ছাড়লে ‘জেগে ওঠে’ দুদক!


প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে যুক্ত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদক ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেই নির্দেশনা ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে পৌঁছায় পরদিন ২৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায়। কিন্তু এর প্রায় এক ঘণ্টা আগেই, বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে, পি কে হালদার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশত্যাগ করেন। এ ঘটনায় হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছিলেন।

এই ঘটনার পর আরও কয়েকজন দেশ থেকে পালিয়েছেন। যেমন, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পরও পালিয়ে গেছেন। একইভাবে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার বরখাস্ত পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা প্রায় ১১শ কোটি টাকা আত্মসাতের পর দেশত্যাগ করেছেন। বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির মূলহোতা আব্দুল হাই বাচ্চুও পলাতক।
সম্প্রতি, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এবং সর্বশেষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান দেশ ছেড়েছেন।

এভাবেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরপরই রাঘববোয়ালরা দেশ থেকে পালিয়ে যান। আর তখনই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা নড়েচড়ে বসে।

গত কয়েক বছরে একজন বড় দুর্নীতিবাজকেও আটক করা সম্ভব হয়নি। অনেকের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তারা পালিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে দুদককে দায়ী করা হচ্ছে। ধীর গতি এবং কঠোর তৎপরতার অভাবে দুদক বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) এবং অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম বলেছেন, "এভাবে বড় দুর্নীতিবাজ দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পুরো দায় দুদকের। সংস্থাটির ধীরে চলো নীতির কারণে বড় দুর্নীতিবাজদের ধরতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।"

২০০৪ সালের দুদক আইনে দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তারে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, দুদক কর্মকর্তারা যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন যদি তাদের বিশ্বাস হয় যে ওই ব্যক্তি দুর্নীতি করেছেন।

তবে, দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, দুদক সবসময় আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে কাজ করে। কারও ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নিতে দুদক বিলম্ব করেনি। নিষেধাজ্ঞা দিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানতে হয় এবং আদালতের অনুমতি নিতে হয়।

হাইকোর্ট বারবার দুর্নীতিবাজদের দেশত্যাগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, পি কে হালদার এবং এস এম আমজাদ হোসেনের দেশত্যাগের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ই-অরেঞ্জের সোহেল রানার দেশত্যাগ নিয়েও উচ্চ আদালত প্রশ্ন তুলেছে।
m mm
বেনজীর আহমেদ এবং মতিউর রহমানের ঘটনা এ ধরনের উদাহরণ। দুদকের ধীর গতি এবং দুর্বল তৎপরতা তাদের পালাতে সাহায্য করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রাঘববোয়ালদের ধরতে দুদকের কাজের গতি আরও বাড়াতে হবে।

Post a Comment

0 Comments