"ভাই গলির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ করে একটা গুলি এসে তার পেটে লাগে।"

"ভাই গলির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ করে একটা গুলি এসে তার পেটে লাগে।"

 

ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকার দিনমজুর মোহাম্মদ রিংকু। গত শনিবার দুপুরে বাসার নিচে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে নেমেছিলেন। দোকানে যাওয়ার পথে তার পেটে গুলি লাগে।
“মেইন রোডে ঝামেলা হচ্ছিল বলে আমার ভাই গলি দিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যেই হঠাৎ করে একটা গুলি এসে তার পেটে লাগে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আহত মোহাম্মদ রিংকুর ছোট ভাই মোহাম্মদ পিংকু।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর স্থানীয় মানুষজন মোহাম্মদ রিংকুকে উদ্ধার করে পাশের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। একইসঙ্গে, তারা স্বজনদের কাছেও খবর পৌঁছান।
“খবর পেয়ে আমরা দৌড়ে হাসপাতালে গেলাম। তারা
 

 ### ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল
গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর মোহাম্মদ রিংকুকে নিয়ে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান পরিবারের সদস্যরা। যদিও সেখানে তাকে ভর্তি করানো যায়নি।
“হাসপাতালে তখন ভিড় ছিল। সব আহত মানুষ। এর মধ্যে ডাক্তার ভর্তি নিলো না। গুলি লাগছে শুনেই বললো ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান,” পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন মোহাম্মদ পিংকু।
ফলে দেরি না করে একই অটোরিক্সা চড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের উদ্দেশে রওনা হন তারা। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোও সহজ ব্যাপার ছিল না।
“সব রোডে ঝামেলা-গোলাগুলি। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে কেমনে পৌঁছামু, সেইটাই নিয়ে আমরা টেনশনে ছিলাম,” বলছিলেন মি. পিংকু।
“পরে মেইন রোড বাদ দিয়ে মহল্লার অলি-গলি ধরে অনেক কষ্ট করে বিকেলের দিকে আমরা ঢাকা মেডিকেলে ঢুকলাম,” বলেন তিনি।
### ভর্তির পর আরেক যুদ্ধ
গুলিতে আহত দিনমজুর মোহাম্মদ রিংকুকে নিয়ে এমন একটি সময়ে স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান, যখন কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন চিকিৎসকরা।
“প্রতিমুহূর্তেই নতুন নতুন রোগী আসছিল, যাদের সামাল দিতে আমাদের রীতিমত হিমশিম অবস্থা হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
এমন পরিস্থিতিতে আহত ভাইকে নিয়ে বিপাকে পড়েন মি. পিংকু।
“ডাক্তাররা রোগী দেখে সামাল দিতে পারছিলেন না, এমন অবস্থা। এই ভিড়ের মধ্যে কিভাবে ভর্তি করাবো, সেইটাই ভাবছিলাম,” বলছিলেন তিনি।
অনেক চেষ্টার পর সন্ধ্যার দিকে গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ রিংকুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে সক্ষম হন স্বজনরা।

 g gg

### ঘাম ছুটেছে রক্ত জোগাড়ে
বহু চেষ্টায় হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলেও সেখানেই সমস্যার শেষ হয়নি। আহত মি. রিংকুর জন্য রক্ত জোগাড় করতেও বেগ পেতে হয়েছে পরিবারের সদস্যদের।
“ভর্তির পরপরই ডাক্তার বললো ভাইকে তাড়াতাড়ি তিন ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। কিন্তু এই কারফিউয়ের মধ্যে একসঙ্গে এত রক্ত কোথায় পাবো?” বলছিলেন মি. পিংকু।
রক্তের সন্ধানে প্রথমে হাসপাতালের ব্লাডব্যাংক এবং স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের একাধিক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মি. রিংকুর পরিবার। কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত না পেয়ে শেষমেশ আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন তারা।
“অনেক খোঁজাখুঁজির পর আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে দুইজনকে পেলাম,” বলছিলেন মি. পিংকু।
কিন্তু কারফিউয়ের মধ্যে তাদেরকে কীভাবে হাসপাতালে আনা হবে, সেটি নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়।
“দিনের বেলাতেই যেখানে কোনও গাড়ি পাওয়া যায় না, সেখানে রাতের বেলায় কিভাবে আনবো তাদের?” বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।
পরে অবশ্য আগের মতোই বেশি ভাড়া দিয়ে রক্তদাতাদেরকে হাসপাতালে আনা হয়। সেই রক্ত দিয়েই কাটে শনিবার রাত। কিন্তু রক্তের তৃতীয় ব্যাগ তখনও জোগাড় হয়নি।
“ডাক্তার বলেছে, সকালের মধ্যে রক্ত প্রস্তুত রাখতে। যেকোনো সময় লাগতে পারে। টেনশনে আমাদের মাথা খারাপ অবস্থা,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. পিংকু।
### শেষমেশ রক্ত জোগাড় হলো কীভাবে?
“আল্লাহই মিলে দিয়েছেন, ভাই। আল্লাহ হাতে করে আমার ভাইকে বাঁচিয়েছেন,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. পিংকু।
মি. পিংকুর ভাইকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় আরেক ব্যাগ রক্ত দিয়েছিলেন হাসপাতালে ভর্তি আরেক রোগীর একজন স্বজন।
“ঘটনা শুনে তিনি বললেন উনার রক্তের গ্রুপের সঙ্গে ভাইয়ের রক্তের মিল আছে। আমরা বললাম, আলহামদুলিল্লাহ্,” বলছিলেন মি. পিংকু। 

Post a Comment

0 Comments