১৬ বছরের ইফাতের বুকের বাঁ পাশে গুলির দাগ ছিল।

 ১৬ বছরের ইফাতের বুকের বাঁ পাশে গুলির দাগ ছিল।


মুঠোফোনে ১৬ বছর বয়সী কিশোর ইফাত হোসেনের দুটি ছবি দেখালেন স্বজনেরা। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সাদা পাঞ্জাবি পরা ইফাত একটি সরু গ্রামীণ রাস্তায় সাইকেলের ওপর বসে রয়েছে। তার ঘন কালো চুল কপালে পড়ে আছে, মুখে প্রাণখোলা হাসি। অন্য ছবিতে, নিথর ইফাতের বুকের বাঁ পাশে একটিমাত্র গুলির চিহ্ন স্পষ্ট।
২০ জুলাই শনিবার রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ইফাতের। সেদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর রাতে মা কামরুন নাহার জানতে পারেন, ইফাতকে গুলি করা হয়েছে।
ইফাতের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের মনপুরা গ্রামে। ২১ জুলাই তাকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কামরুন নাহার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছেন। স্বজনেরা তাঁকে পাশের গ্রাম বাকিপুরে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানেই আজ বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় কামরুন নাহারের সঙ্গে।

https://www.highrevenuenetwork.com/q4xde460d?key=c8320fc0f68fee4f85e70fa64833d9da

ছেলের গুলিবিদ্ধ ছবি দেখিয়ে কামরুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, "আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। সে একজন আহত মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। কোনো রাজনীতি সে করত না। তবু তার বুকে গুলি করা হলো।"
ইফাতের বাবা, কামরুন নাহারের স্বামী, উত্তরা ব্যাংকে চাকরি করতেন এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে মারা যান। স্বামীর চাকরির সুবাদে তারা যাত্রাবাড়ীর ভাড়া বাসায় থাকতেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে কামরুন নাহারের সংসার। একমাত্র ছেলে ইফাত হোসেন স্থানীয় এ কে হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ত।
কামরুন নাহার বলেন, সেদিন ছিল শনিবার। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছেলের ঘুম ভাঙে। হাত-মুখ ধুয়ে বেলা একটার দিকে বাসার বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তিনি নিষেধ করেছিলেন, কারণ বাইরে গণ্ডগোল হচ্ছে। কিন্তু ইফাত বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বেলা তিনটার দিকে ইফাতের কয়েকজন বন্ধু খবর দেন যে, ইফাত অসুস্থ এবং তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার মৃত্যুর খবর পরে জানতে পারেন। এরপর কয়েক বন্ধু ও এলাকার লোকজন তার লাশ বাসায় নিয়ে আসেন।
কামরুন নাহার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলাম। ছেলে-মেয়েদের আঁকড়ে ধরে স্বামী হারানোর শোক ভুলে থাকার চেষ্টা করছিলাম। নতুন করে স্বপ্ন দেখেছিলাম; কিন্তু এখন সব শেষ হয়ে গেছে।”
ইফাতের মামা শোয়েব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, “ইফাত অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির ছিল। কে ভাবতে পেরেছিল যে সে এভাবে মারা যাবে?” 

Post a Comment

0 Comments