হেফাজতের কার্যালয় নিয়ে টানাপোড়েন

 হেফাজতের কার্যালয় নিয়ে টানাপোড়েন

২০১০ সালে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। শুরু থেকেই হাটহাজারী মাদ্রাসা, যা জামিয়া আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম নামে পরিচিত, সংগঠনটির সব কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করছে। কাগজপত্রে এই মাদ্রাসাকেই অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ১৪ বছর পর কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিয়ে হেফাজত নেতাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের সুবিধার জন্য ঢাকাকেন্দ্রিক শীর্ষ নেতারা রাজধানীকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম পরিচালনার পক্ষে। গত মে মাসে সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। তবে চট্টগ্রামের নেতারা এই প্রস্তাব মানতে রাজি নন।

হেফাজত নেতাদের একাংশের মতে, হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকেই সংগঠনটির শক্তিশালী অবস্থান গড়ে উঠেছে, তাই চট্টগ্রাম থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরানোর কোনো প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে, ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থানান্তরের সমর্থক নেতাদের মতে, রাজধানী থেকে দূরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকার কারণে বিভিন্ন ইস্যুতে সভা আহ্বান বা জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হলে ঢাকাকেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
সূত্রমতে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জায়গা চূড়ান্ত করতে মাসখানেক আগে হেফাজতের কয়েকজন নেতা মগবাজার এবং পুরানা পল্টন এলাকায় একাধিক ভবন পরিদর্শন করেছেন। আগস্টের মধ্যেই ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন করতে চান তারা।

২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মরহুম শাহ আহমদ শফী। দলের বর্তমান আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীও সেখানেই থাকেন। অধিকাংশ কওমি মাদ্রাসা চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় সংগঠনের গঠনতন্ত্রেও কেন্দ্রীয় কার্যালয় চট্টগ্রামে রাখা হয়। প্রথমদিকে ঢাকার বারিধারার একটি মাদ্রাসায় মহাসচিবের কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে খিলগাঁওয়ের মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় স্থানান্তর করা হয়।
s ss
যে কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় সভা আহ্বান করা হয়। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব সভায় যোগদান করা অনেকের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকায় স্থানান্তর করতে চাইছেন। তারা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন এবং সুবিধাজনক এলাকায় জায়গা খুঁজছেন।

সূত্রমতে, ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের অনুসারী। তবে তাদের কেউ এখনই গণমাধ্যমে কথা বলতে চান না।

তিন বছর কারাগারে থাকার পর গত ৩ মে মাওলানা মামুনুল হক মুক্তি পান। ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে ঘোষিত হেফাজতের কমিটিতে তাকে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। তবে কারামুক্ত হওয়ার পর তাকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদে পুনর্বহালের প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, কারামুক্তির পর মাওলানা মামুনুল হক হেফাজতের কোনো কর্মসূচিতে উপস্থিত হননি। তিনি বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন এবং একটি প্ল্যাটফর্মে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে চান।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকায় স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে সংগঠনের মহাসচিব সাজিদুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে সংগঠনের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকায় স্থানান্তরের বিষয়ে সম্প্রতি নতুন কোনো আলোচনা হয়নি।’
ss s
এদিকে, পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত বিষয় সংশোধনের দাবিতে হেফাজতের নেতারা প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে আলোচনা সভা করেছে সংগঠনটি। হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস বলেছেন, ‘শিক্ষানীতির ওপর নতুন ৭টি দাবি তুলে ধরেছি। আশা করছি, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, না হলে নতুন সিদ্ধান্ত নেবেন শীর্ষ নেতারা।’


Post a Comment

0 Comments