“গুম হওয়া ব্যারিস্টার হাসিনার গোপন কারাগার ‘আয়নাঘর’ সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন”
বাংলাদেশের সদ্য ক্ষমতাচ্যুত নেতা শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ভিন্ন মতালম্বীদের কঠোরভাবে দমন করেছিলেন। তার শাসনামলে গুম ও খুন প্রায় স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠেছিল। ২০১৬ সালে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আহমদ বিন কাসেমকে গুম করে হাসিনার গোপন কারাগার ‘আয়নাঘর’ এ আটক করা হয়, যেখানে তিনি আট বছর বন্দী ছিলেন।
এএফপির সূত্রে লুক্সেমবার্গভিত্তিক গণমাধ্যম আরটিএল আহমদ বিন কাসেমের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। সাক্ষাৎকারে জানা যায়, তাকে চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে গোপন কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। মুক্তির সময় গুলির আওয়াজ শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি এবং পরে খুঁজে পান, তাকে একটি ময়লা খাদে ফেলে দেয়া হয়েছে। তখনই জানতে পারেন, শেখ হাসিনা এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং আহমদ সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পেয়েছেন।
৪০ বছর বয়সী আহমদ জানিয়েছেন, আট বছর তিনি কোনো প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের ছোঁয়া পাননি এবং ভেবেছিলেন তাকে হত্যা করা হবে। তিনি জানতেন না, শেখ হাসিনা কয়েক ঘণ্টা আগেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। ৫ আগস্ট, ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পর হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। সেসময়ও আহমদ অন্ধকার আয়নাঘরেই ছিলেন।
আহমদ বলেন, সেখানে সান্ধ্য আযান শুনতে পেতেন, কিন্তু তার দিনের হিসাব কেমন ছিল সে বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না। মিউজিক বন্ধ হলে অন্য বন্দীদের চিৎকার শুনতে পেতেন। ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, সেখানে তিনি একা নন এবং বন্দীরা নির্যাতনের কারণে চিৎকার করতেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর হাসিনা ছয় শতাধিক মানুষকে গুম করেছেন। ২০২২ সালে আয়নাঘরের খবর প্রকাশের পর হাসিনা সরকার তা অস্বীকার করেছে এবং গুমের বিষয়টিও অস্বীকার করে।
ff f
আহমদের বাবা জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি দেয়া হয়। আহমদ গুম হওয়ার পরপরই তার বাবা ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আহমদ তার বাবার বিচারিক কার্যক্রমে আইনি লড়াই করতে লন্ডন থেকে ঢাকায় এসেছিলেন।
এক রাতে সাদা পোশাকধারীরা তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। আহমদ জানান, তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি এমন পরিস্থিতি হবে। গুম হওয়ার চার সপ্তাহ পর তার বাবার ফাঁসি কার্যকর হয়। আহমদ বাড়ির পথ খুঁজে পেয়ে একটি হাসপাতালে পৌঁছান এবং সেখান থেকে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। মুক্তির খবর পেয়ে তিনি জানতে পারেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। আহমদ পরিবারের কাছে ফিরে এলেও তার মানসিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।

0 Comments