পলাতক স্বৈরশাসকরা কেউই রাজনীতিতে ফিরে আসতে সক্ষম হননি।
আশির দশকে, ফিলিপাইন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হলেও, প্রেসিডেন্ট মার্কোসের কোনো উদ্বেগ ছিল না। তিনি অর্থনীতির উন্নতির পরিবর্তে বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে চিত্রকর্ম সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন, এবং তার স্ত্রী ইমেলদা মার্কোসও জুতা, গাউন ও গহনায় লাখ লাখ পেসো খরচ করেছিলেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না এবং বিরুদ্ধ মত দমন করা হচ্ছিল নির্মমভাবে; সরকারি বাহিনী ও মার্কোসের অনুগতদের হাতে প্রায় ৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মার্কোসকে এক নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক হিসেবে অভিহিত করা হয়। এক পর্যায়ে, ক্ষুব্ধ ফিলিপিনোরা আন্দোলন শুরু করে, যা ১৯৮৬ সালের গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। মার্কোস দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপে আশ্রয় নেন, যেখানে তিন বছর পর নির্বাসিত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফও করুণ পরিণতির শিকার হন। ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে, পরবর্তীতে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট হন। ২০০৭ সালে বেনজির ভুট্টোর হত্যার পর পাকিস্তানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং মোশাররফ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। ২০০৮ সালে তার দলের পরাজয়ের পর তিনি পদত্যাগ করে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান এবং দেশে ফিরে আসতে পারেননি।
বলিভিয়ার ইভো মোরালেস, যিনি প্রথম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ২০১৯ সালে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে পদত্যাগ করে মেক্সিকো চলে যান। দেশে ফিরলেও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে পারেননি।
চিলির অগাস্তো পিনোশে ক্ষমতা হারানোর পর লন্ডনে আশ্রয় নেন, কিন্তু ১৯৯৮ সালে গ্রেফতার হয়ে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফিরে হত্যা, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলার মুখে পড়েন এবং ৯১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
ff f
শ্রীলংকার গোতাবায়া রাজাপাকসে ২০২২ সালে দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পালিয়ে যান। প্রথমে মালদ্বীপে, পরে সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেন এবং অবশেষে থাইল্যান্ডে যান। যদিও দেশে ফিরেছেন, রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে পারেননি।
তিউনিসিয়ার জাইন এল-আবিদিন বেন আলি ২০১১ সালের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান এবং সেখানে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, "স্বৈরশাসকদের দেশত্যাগের পর দেশে ফিরে আসার সুযোগ কম থাকে যদি পুরনো ক্ষমতা কাঠামো অপরিবর্তিত থাকে। তাদের ফিরে আসা খুবই কঠিন, বিশেষত যদি পুরনো শাসন ব্যবস্থা ভেঙে যায়।"
আফগানিস্তানের আশরাফ গানি ২০২১ সালে দেশ ছাড়েন এবং বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মানবিক আশ্রয়ে আছেন। দেশে ফিরতে পারেননি এবং রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান বলেন, “ফেরার সুযোগ থাকে যদি পার্টি শক্তিশালী হয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ এখন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের বিচার শুরু হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”

0 Comments