স্বাস্থ্য খাত দলবাজির পরিণামে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

 স্বাস্থ্য খাত দলবাজির পরিণামে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রভাব স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপকভাবে পড়েছে। এতদিন যারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আধিপত্য দেখিয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন। চিকিৎসক ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে সংকট তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রশাসনেও এর প্রভাবে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চিকিৎসকরা যখন বাড়তি সুবিধা পাওয়ার আশায় অনিয়ম ও দুর্নীতিতে লিপ্ত হন, তখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্বাস্থ্য খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, "বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য চিকিৎসকরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এতে অনেক অযোগ্য ব্যক্তি পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়েছেন, আর যোগ্যরা বঞ্চিত হয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্তরা শঙ্কিত, আতঙ্কিত এবং বিব্রত বোধ করছেন, ফলে তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন। এতে স্বাস্থ্য প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।"


অধ্যাপক বে-নজির আরও বলেন, "স্বাস্থ্যসেবার যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সেজন্য বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া উচিত। দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন, এবং কারও বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। পাশাপাশি, একটি কমিশন গঠন করে বিগত সময়ের সব বদলি, পদায়ন, এবং পদোন্নতি বিশ্লেষণ করে যারা বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের প্রাপ্য মর্যাদার সুপারিশ করতে হবে। অনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্তদের সুবিধা বাতিল করতে হবে এবং দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে বৈষম্য দূর হবে। এছাড়া সরকারি চিকিৎসকদের রাজনৈতিক কাজে জড়িত না হওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বিএমএ চিকিৎসকদের একমাত্র অরাজনৈতিক সংগঠন হওয়া উচিত, যার মাধ্যমে তারা তাদের দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করবেন।"


সংশ্লিষ্টরা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজধানীসহ সারা দেশে আওয়ামী সমর্থিত চিকিৎসকরা সরকারি-বেসরকারি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন। টানা পাঁচ দিন অনেকে কর্মস্থলে আসেননি। এমনকি জাতীয় ইনস্টিটিউট ও মেডিকেল কলেজের বিভাগীয় প্রধানরাও অনুপস্থিত ছিলেন। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। আওয়ামী লীগবিরোধী চিকিৎসক-কর্মকর্তারা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ এবং মহড়া দিয়ে শক্তি প্রদর্শন করেছেন। রাজধানীর বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী সমর্থিত চিকিৎসকদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দখলে নেওয়া হয়েছে, যা স্বাস্থ্য খাতের স্থবিরতা দীর্ঘায়িত করছে।

ss s


বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব এই পরিস্থিতির জন্য রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবী উভয়কেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, "সরকার এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে পেশাজীবীরা প্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পেতে দলবাজি করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে চিকিৎসা একটি সর্বজনীন পেশা, তাই চিকিৎসকদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা উচিত নয়। বদলি ও পদায়নে রাজনৈতিক প্রভাব না রেখে উপযুক্ততার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, অন্যথায় এই পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি হবে।"


সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে বর্তমানে ৩৬ হাজার ক্যাডার পদ রয়েছে, যেখানে প্রথম শ্রেণির পদ মাত্র দুটি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির পদ ১৪টি। তবে এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন নীতিমালা মানা হয়নি। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পদায়ন করা হয়েছে, যা কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

Post a Comment

0 Comments