১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা পাচার, এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।

 ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা পাচার, এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।

১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারের অভিযোগে আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের মালিক মো. সাইফুল আলমসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, ওভার ইনভয়েস, আন্ডার ইনভয়েস ও সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান জানান, সিআইডি বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছে যে এস আলমসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে মাত্র একদিনের ব্যবধানে বাংলাদেশে পিআর গ্রহণ করেছেন। তারা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার করে নিজ এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রয় ও ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। পাচারকৃত অর্থে প্রায় ২৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা মূলধনের ‘ক্যানালি লজিস্ট্রিক প্রাইভেট লি.’ নামক প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া ভুয়া নথি তৈরি, জালিয়াতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে বিদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগের জন্য নামে-বেনামে ৬টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশে ‘শেল কোম্পানি’ খুলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমসহ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় সংঘবদ্ধভাবে মানি লন্ডারিং অপরাধ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। সিআইডি মানি লন্ডারিং আইন ও বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।

ff f

আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ঘনিষ্ঠ এবং তাদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পাওয়া অন্যতম বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংক দখল, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, কমার্স ব্যাংকসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম পরিবারের সদস্যসহ গ্রুপের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশ ছেড়েছেন। সূত্র জানায়, প্রথমে কেবল ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম। এরপর ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকে অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকা বের করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই পাচার করেছে এস আলম গ্রুপ। বিপুল অঙ্কের ঋণ বের করতে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল একটি বড় চক্র গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই গভর্নর ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদারসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের পক্ষে কাজ করেন। এছাড়া, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে থাকায় ব্যাংক দুটির বেশির ভাগ ঋণ এই গ্রুপের কাছে আটকে রয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে ঢাকার গুলশান, বসুন্ধরা, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থাবর সম্পত্তি কিনেছে গ্রুপটি। এছাড়া, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জমি কিনেছে এবং দেশের বাইরে একাধিক তারকা হোটেলের মালিক হওয়ার অভিযোগও রয়েছে এস আলমের বিরুদ্ধে।


Post a Comment

0 Comments