“শেষ তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের অব্যবস্থাপনা ঋণ”

 “শেষ তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের অব্যবস্থাপনা ঋণ”


দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের সমর্থিত ব্যবসায়ীরা যেমন সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম এবং সালমান এফ রহমান হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে সরিয়ে নিয়েছেন, তেমনি সরকারও ব্যাংক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে পরিমাণ বাড়িয়েছে। শুধু ব্যাংক খাতেই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বিদায়ী অর্থবছরের শেষ তিন মাসে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জরুরি প্রয়োজনের জন্য আট হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে পারার সুযোগ থাকলেও, একদিনে ৭১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়া হয়েছে। এভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারের ঋণের জোগান দেয়ার ফলে মুদ্রাসংস্থান বেড়ে গেছে, যা মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি বরং এটি আরো বেড়ে গেছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকার তার অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে ঋণ নেয়। এই ঋণ দেশের ভেতর ও বাইরের উভয় জায়গা থেকে নেয়া হয়। দেশের ভেতর ব্যাংকিং খাত ও ব্যাংক বহির্ভূত সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হয়। জানা গেছে, সরকার সমর্থিত ব্যবসায়ী গ্রুপ দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছে না, যার ফলে ব্যাংকিং খাতে টাকার সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ তার আয় দিয়ে ব্যয় মেটাতে পারছে না এবং ব্যাংকিং খাতে আমানত আসছে না বরং কিছু ক্ষেত্রে সঞ্চিত টাকা ভাঙতে হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার সঙ্কট আরও প্রকট হয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা, যেমন কলমানি মার্কেট থেকে টাকা সংগ্রহ করতে পারছে না এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ জোগান নিতে বাধ্য হচ্ছে। অর্থবছরের শেষ দিনগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৮ হাজার কোটি টাকা ধার দেয়ার রেকর্ড করেছে।


বছরের শেষ সময়ে ব্যাংকগুলো টাকার সঙ্কটের কারণে কাক্সিক্ষত হারে টাকা উত্তোলন করতে না পারায় সরকার বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। সাধারণভাবে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে পর্যাপ্ত অর্থ না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক একদিনে আট হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে, কিন্তু অর্থবছরের শেষ তিন মাসে, অর্থাৎ ৯০ দিনে ৬২ দিন সরকার এই সীমার বাইরে ঋণ নিয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত অতিরিক্ত ঋণ নেয়া হলেও, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এর অনুমোদন এক আগস্ট দেয়া হয়েছে।


fff

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে সরকারের ঋণ নেয়ার সীমা ছিল আট হাজার কোটি টাকা, কিন্তু নেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা সীমার চেয়ে ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা বেশি। ৩০ এপ্রিলেও সীমার অতিরিক্ত ঋণ নেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। মে মাসে নির্ধারিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত ঋণ নেয়া হয়েছে ২০ দিন। ৩০ মে, ৩৩ হাজার ১২৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে, যা সীমার অতিরিক্ত ২৫ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। জুনের শেষ সপ্তাহে ব্যাপক ঋণ নেয়া হয়েছে, যেমন ২৪ জুন, ৬৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে, যা সীমার চেয়ে ৫৮ হাজার ৯০ কোটি টাকা বেশি। ২৫ জুন ঋণ নেয়া হয়েছে ৭০ হাজার ৪২২ কোটি টাকা, যা সীমার অতিরিক্ত ৬২ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। ২৬ জুন সবচেয় বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে, ওইদিন ৭১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে, যা সীমার প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা বেশি।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নীতিনির্ধারকদের ভুল নীতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে এবং ঋণের সুদও বাড়ছে। বিনিময় হার নীতি ভুল ছিল এবং দীর্ঘ দিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ৮৫ টাকায় রাখা হয়েছিল, যা বর্তমানে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। এই ভুল নীতির কারণে ব্যাংকিং খাতে কাক্সিক্ষত পরিমাণ টাকা নেই এবং সুদ ব্যয় বেড়ে গেছে, ফলে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments