ইসলামী ব্যাংকের সফলতা যাদের হাত ধরে এসেছে, তাদেরই মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে।

ইসলামী ব্যাংকের সফলতা যাদের হাত ধরে এসেছে, তাদেরই মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে।


ব্যাংক খাতের আইনগত সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদকে ব্যাংকের পরিচালনায় হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যাংক খাতকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক এবং স্বার্থগোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে দক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করতে হবে, যা বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকের নিয়োগ প্রক্রিয়া তদারকি করবে। ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক হিসেবে সংশ্লিষ্ট খাতের প্রকৃত অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিতে হবে। যাদের নেতৃত্বে ইসলামী ব্যাংক সফল হয়েছে, তাদেরকেই ব্যাংকের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য পৃথক আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং প্রয়োজনে একটি পৃথক কমিশন গঠন করতে হবে। সব পর্যায়ে সততা ও যোগ্যতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে হবে। ব্যাংকিং কমিশনকে স্বাধীন নিরীক্ষকের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ করতে হবে এবং দুর্নীতি, নীতিহীনতা ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংককে পারিবারিক ও সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। ব্যাংক পরিচালনায় অনিয়মের বিষয় দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে একটি ডেডিকেটেড বেঞ্চ গঠন করতে হবে। 


সচেতন ব্যাংকার সমাজের উদ্যোগে "ব্যাংক খাত সংস্কার: আমাদের করণীয়" শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সোমবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ, আর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান।


অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, সাবেক সচিব ড. এম আসলাম আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আওয়াল সরকার, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ইঞ্জিনিয়ার এম আলাউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকীব নসরুল্লাহ, সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সহসভাপতি আবুল কাসেম হায়দার, এবং হকস বে-এর কর্ণধার আব্দুল হক। 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটির স্বাগত বক্তব্য দেন সচেতন ব্যাংকার সমাজের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশিষ্ট ব্যাংকার ড. এম কামাল উদ্দিন জসীম।


সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, কোনও ব্যাংকের পরিচালক নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন না এবং একই সঙ্গে অন্য কোনও ব্যাংকের পরিচালকও হতে পারবেন না। পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার অতীত কর্মজীবনের রেকর্ড ও অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিচালনা পরিষদে এক-তৃতীয়াংশ স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে এবং তাদেরকে নিরপেক্ষ, বিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নির্বাচন করতে হবে। শুধু আইন প্রণয়ন বা সংস্কার নয়, শক্তিশালী সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চর্চা করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে সঠিক নিয়ম প্রয়োগ করতে হবে। পুঁজির আনুপাতিক হারে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান থাকতে হবে। ব্যাংকের নন-পারফর্মিং বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা প্রয়োজন এবং বিনিয়োগ আদায়ে ব্যাংক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও দেশের আইনি ব্যবস্থার সমন্বিত ভূমিকা থাকতে হবে। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ২৬ শতাংশের অধিকার ইসলামী ব্যাংকগুলোর; তাদের সঠিক নির্দেশনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং আইন প্রণয়ন করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য যথাযথ আইন প্রণয়ন করতে হবে। 

fff

এক ব্যাংকের পরিচালকদের পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ না দেওয়ার কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হবে। একই পরিবারের দুইজনের বেশি সদস্য পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না এবং পরপর দুইবার তিন বছরের বেশি মেয়াদে পরিচালক থাকা যাবে না। পারিবারিক পরিচালক হলেও তাদের উচ্চশিক্ষিত, ব্যাংকিং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং বয়স বিবেচনা করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। রাজস্ব নীতি ও মুদ্রা নীতির সমন্বয় করে নীতি নির্ধারণ করতে হবে এবং দেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা উচিত। ছোট ব্যাংকগুলোকে একত্রিত করা যেতে পারে এবং দুর্বল ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় তহবিল দিয়ে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। প্রচলিত ব্যাংককে ইসলামীকরণ করতে হলে পুরোপুরি ইসলামীকরণ করা প্রয়োজন। শুধু উইন্ডো বা শাখা দিয়ে ইসলামী মান ধরে রাখা কঠিন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে শক্তিশালী শরীয়াহ বোর্ড থাকা উচিত। ব্যাংকের পরিচালক তার পুঁজির ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ নিতে পারবেন না। অর্থ আত্মসাৎকারী মালিকদের শেয়ার বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করতে হবে এবং বাকি অর্থ জামানত বিক্রি করে পরিশোধ করতে হবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের বাদ দিতে হবে এবং পূর্বের মানে ব্যাংককে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকে যেসব শরীয়াহবিরোধী আইন-কানুন প্রণয়ন করা হয়েছে, সেগুলো এখনই বাতিল করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments