ভারতের প্রতিশোধমূলক পানির কারণে ডুবছে বাংলাদেশ: রাজধানীতে প্রতিবাদের ঝড়

ভারতের প্রতিশোধমূলক পানির কারণে ডুবছে বাংলাদেশ: রাজধানীতে প্রতিবাদের ঝড়

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন একবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, "আমাদের বিজয়, ভারতের বিজয়; ভারতের বিজয়, আমাদের বিজয়।" তাঁর এ বক্তব্য সত্য ও যথার্থ হতে পারত, যদি একটি শব্দ পরিবর্তন করা যেত। আর তা হলো, "শেখ হাসিনার বিজয়, ভারতের বিজয়; ভারতের বিজয়, শেখ হাসিনার বিজয়।" কারণ, জুলাই বিপ্লবের পর ভারতীয় আচরণ ও পদক্ষেপে পরিষ্কারভাবে বোঝা গেছে, "শেখ হাসিনার পরাজয়, ভারতের পরাজয়; ভারতের পরাজয়, শেখ হাসিনার পরাজয়।"

জুলাইয়ের বিপ্লবীরা দাবি করেছে, শেখ হাসিনার পরাজয়ের পর ভারতে পালিয়ে গিয়ে প্রতিশোধ নিতে এবং 'হাসিনার বাংলাদেশ' পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে ভারত একের পর এক পাল্টা বিপ্লবের চেষ্টা চালাচ্ছে। সেনাবাহিনীতে, বিচার বিভাগে, এবং ১৫ আগস্টের পর পাল্টা বিপ্লবের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর, পরাজিত সরকারের অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসহযোগিতার অজুহাতে আরেকটি পাল্টা বিপ্লব সংগঠনের চেষ্টা করছে।

mm m

কিন্তু ছাত্র জনতা ও দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে ভারত খুব বেশি সুবিধা করতে না পেরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতা নেওয়ার আগে ভারতীয় টিভি চ্যানেলে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে পার্শ্ববর্তী কেউ স্থিতিশীল থাকবে না। মিয়ানমার, পশ্চিমবঙ্গ, এবং সেভেন সিস্টার্স অস্থিতিশীল হবে।" যদিও ভারতীয় মহল থেকে এর আনুষ্ঠানিক প্রতিউত্তর আসেনি, ড. ইউনুসের এই বক্তব্য যে দিল্লির কাছে বিরক্তির কারণ হয়েছিল, তা সহজেই অনুমেয়।

প্রথম কার্যকর আঘাত এল উত্তর-পূর্ব ভারত তথা সেভেন সিস্টার্স থেকেই, ভারতীয় পানি আগ্রাসনের মাধ্যমে। ভারতের ত্রিপুরায় অতিবৃষ্টির অজুহাতে বাংলাদেশকে কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই বিভিন্ন বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে মুহুরী, গোমতী, এবং খোয়াই নদীর পানি সুনামির মতো ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে, ডুবিয়ে দিয়েছে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, এবং সিলেটসহ আরও কয়েকটি জেলা। সিকিমের তিস্তা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধে ধস নামার কারণে উত্তরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

m mm

বর্তমানে, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। ভারতের পানি আগ্রাসন সাধারণ জনগণ সহজভাবে নেয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ জনগণ ভারতের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে। গত রাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে, এবং আজ ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এই পানি আগ্রাসনের ফলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মন্দির ও মন্দিরে থাকা দেব-দেবী বন্যার পানিতে ধ্বংস হয়ে গেছে। সামাজিক মাধ্যমে এর প্রতিবাদে সরব হয়েছে অনেকেই। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ জনসাধারণ ভারতের এই আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার দাবি তুলেছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ দাবি করছে যে, ভারত যে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করেছে, তা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা হোক এবং উপদ্রুত এলাকাগুলোতে বিদেশি গণমাধ্যমগুলোকে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হোক। 

m mm

ভারতের এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের মানুষকে আরও বেশি ভারতবিরোধী করে তুলেছে। বাংলাদেশের জনগণ এখন চায়, ভারতের এই আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিক এবং জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে করা বৈষম্যমূলক চুক্তিগুলো বাতিল করা হোক।
 

Post a Comment

0 Comments