সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি তুলে ধরেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এই ঘোষণা দেন।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নাহিদ ইসলাম মাইকে সমবেত মানুষের উদ্দেশে বলেন, “মানুষের জীবন ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা এক দফা দাবির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই এক দফা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।”
নাহিদ আরও জানান, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দ্রুতই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য একটি সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করবে। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা তুলে ধরব।”
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা এবং পুরো মন্ত্রিসভা, এমনকি পুরো সরকারকেই পদত্যাগ করতে হবে। এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, যেখানে কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র বা ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।”
নাহিদ স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের অংশ হতে জনগণকে আহ্বান জানান এবং পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় সংগঠিত হওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন। ১৬ জুলাই সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হওয়ার পর আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। সংঘর্ষ ও সহিংসতায় বর্তমানে ২১৬ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হতাহতের ঘটনায় ৯ দফা দাবি দিয়েছিল। এবার এক দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। আজ শহীদ মিনারে অন্তত ছয়জন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন, যাঁদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের উল্লেখযোগ্য। তাঁদের মধ্যে নাহিদসহ তিনজন বক্তব্য দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজ শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এবং রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। আজকের কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হন। শহীদ মিনার চত্বরে ও আশপাশের এলাকায় হাজারো মানুষের ভিড়ের কারণে পা ফেলার জায়গা ছিল না।
শহীদ মিনারের বাইরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এবং দেশের অন্যান্য জেলায়ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে সকালে আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোটের নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। দলের পক্ষ থেকে তিনজনকে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে—জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ও মাহবুব উল আলম হানিফ। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে আলোচনায় থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মাহবুব উল আলম হানিফ জানিয়েছেন, সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার প্রথম আলোকে বলেছেন, “এখন আলোচনার সুযোগ নেই। সিদ্ধান্ত আসবে রাজপথ থেকে।”
0 Comments