অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনীতিতে অলিগার্কদের প্রভাব কমানো।

 অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনীতিতে অলিগার্কদের প্রভাব কমানো।

যারা ক্ষমতার প্রত্যক্ষ সমর্থন পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছেন, তাদের আমরা 'অলিগার্ক' হিসেবে চিনি। এই অলিগার্করা তাদের শক্তিশালী অবস্থান কেবল নীতিনির্ধারণে নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণেও ব্যবহার করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের গত দেড় দশকে, রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু বড় ব্যবসায়ী বিশালভাবে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন এবং এখন দেশের অর্থনীতির বড় অংশ তাদের এবং তাদের মালিকানাধীন শিল্প গ্রুপগুলোর নিয়ন্ত্রণে। তবে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ অলিগার্কদের অনেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন, কেউ কেউ গ্রেফতার বা সম্পদ ক্রোকের আশঙ্কায় ভুগছেন।


এই দেড় দশকে যে ব্যবসায়ীরা নিজেদের অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলো হলো সালমান এফ রহমান (বেক্সিমকো গ্রুপ), মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম গ্রুপ), মুহাম্মদ আজিজ খান (সামিট গ্রুপ), আহমেদ আকবর সোবহান (বসুন্ধরা গ্রুপ), মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম (ওরিয়ন গ্রুপ), এবং মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার (নাসা গ্রুপ)।

এর মধ্যে, সালমান এফ রহমান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে, তিনি আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে শুরু করে তথ্য প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, মিডিয়া, এবং রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন খাতে ৩০টিরও বেশি কোম্পানি রয়েছে বেক্সিমকোর। সরকারের পতনের পর তিনি একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন এবং বর্তমানে ১০ দিনের রিমান্ডে আছেন। 

এছাড়া মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার, আর্থিক খাতেও বড় মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক ব্যাংক থেকে বিশাল পরিমাণ ঋণ নিয়ে এবং ব্যাংক খাতে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে এখন ৫০টিরও বেশি কোম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে বিদ্যুৎ, সিমেন্ট, এবং রিয়েল এস্টেট উল্লেখযোগ্য।

অন্যদিকে, মুহাম্মদ আজিজ খান, সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা, দেশের বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সামিট গ্রুপ বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ১৮ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে। 

ff f

এসব ব্যবসায়ীর বিপুল প্রভাব অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অলিগার্কদের প্রভাব কমানো অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, এবং এটি সফলভাবে করতে হলে সরকারের চূড়ান্ত সতর্কতা ও পরিপক্বতা দরকার।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশেও ক্ষমতার সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু বড় ব্যবসায়ীর উদ্ভব হয়েছে, তবে এরা দক্ষিণ কোরিয়ার চেবলগুলোর মতো জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সম্পদ লুটপাট ও বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ অবস্থায় সঠিক পদক্ষেপ নেয়া না হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় সংকট তৈরি হতে পারে, তবে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনো প্রতিষ্ঠান ধসে না পড়ে বা অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব না পড়ে।


Post a Comment

0 Comments