সৌদি আরবকে খুশি রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি টার্মিনাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

সৌদি আরবকে খুশি রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি টার্মিনাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) একটি সৌদি ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বিতর্কিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের নির্দেশে এ লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মন্ত্রণালয় এই ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।



সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হলেও নানা জটিলতায় বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন করে টেন্ডার করতে পারেনি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ডিপিএম (ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড) পদ্ধতিতে বিদ্যমান অপারেটরদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়োগ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ, যাতে সেবা বন্ধ না হয়। অপারেটররা বিভিন্ন সময়ে হ্যান্ডলিং ফি বাড়ানোর জন্য আবেদন করলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই আবেদন বিবেচনায় নেয়নি।

২০১৯ সালে এনসিটির জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হলে একাধিক প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নেয়। কিন্তু হঠাৎ করেই মন্ত্রণালয় থেকে এই টেন্ডার বাতিল করা হয় এবং এনসিটি বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এজন্য ‘কেবিনেট কমিটি অব ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স’ নামে একটি কমিটিও গঠন করা হয়।

m mm

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্র জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বিতর্কিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের নজর পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর। মন্ত্রণালয় ও বন্দরের বেশির ভাগ শীর্ষ কর্মকর্তার মতের বিপরীতে তাদের বাধ্য করা হয় টেন্ডার বাতিলে। বিদেশি কোম্পানির হাতে এনসিটি হস্তান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়ে ওঠে। সরকার পতনের কয়েক সপ্তাহ আগেও এ নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে বন্দর সূত্র জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, এনসিটি বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, এবং এ জন্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটিও গঠন করেছিল। প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছে। তবে সরকার পতনের পর এ বিষয়ে আর কোনো সিদ্ধান্ত বা অগ্রগতি জানানো হয়নি। বর্তমানে টার্মিনালটি বিদ্যমান অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

m mm

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, একটি টার্মিনাল সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে, অথচ সেটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয় সরকারেরই নীতিনির্ধারকদের দ্বারা। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সৌদি আরবকে খুশি করার জন্য একটি টার্মিনাল ইতোমধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা বিদেশিদের হাতে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম তুলে দিতে চায়, তারাই হচ্ছেন ‘গোপন অংশীদার’। তারা বিদেশিদের আড়ালে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এ ধরনের চক্রান্ত করে। কেবল চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি নয়; সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পেও এটি ঘটে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর শুরু থেকেই আমাদের দেশের অপারেটররাই পরিচালনা করছে, তাহলে এখানে বিদেশিদের প্রয়োজন কী? যদি প্রযুক্তিগত বা দক্ষতার কোনো ঘাটতি থাকে, তবে দেশের মানবসম্পদকে প্রশিক্ষিত করা বা প্রযুক্তির ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে। তাই বিদেশি কোম্পানির কাছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বন্দরের কোনো টার্মিনালই তুলে দেওয়া উচিত নয়। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য।

mmm

এখন দাবি উঠেছে যে, দেশীয় প্রতিষ্ঠান বা অপারেটরদেরকে ওপেন টেন্ডারের (ওটিএম) মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক দামে দীর্ঘমেয়াদে এই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হোক। এতে সরকার যেমন কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করবে, তেমনি মানবসম্পদ উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ দেশও বহুভাবে উপকৃত হবে।
 

Post a Comment

0 Comments