"ঘুষের বদলে কী নেবেন?"

"ঘুষের বদলে কী নেবেন?"


 জগলুল মিয়া প্রতিদিন সকালে একমুঠো ঘুষ খেয়ে দিন শুরু করতেন। সরকারি অফিসের পিয়ন হিসেবে তাঁর অভ্যাস ছিল এটাই। কিন্তু তিনি জানাচ্ছেন, ঘুষের বাজার এখন খুবই মন্দা। সামর্থ্য থাকলেও দুমুঠো ঘুষের যোগান মিলছে না।

গত মঙ্গলবার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জগলুল বলেন, "বড় স্যারদের ভাগ দিয়ে আমিও কিছু পেতাম। তাও মাসে ১০-১৫ লাখ টাকার আয় হতো। এখন ভাগ নেই, ভাগশেষও নেই। এটাই হয়তো কপালে ছিল!" গুলশানের ডুপ্লেক্স বাড়িতে বসে বিষণ্ন মুখে তিনি আরও যোগ করেন, "২ কোটি টাকা দিয়ে একটা ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছিলাম। এখন প্রতি মাসে সাড়ে ৩ লাখ টাকার কিস্তি দিতে হয়। ছোট ছেলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, বড়টা কানাডায় থাকে। বউ অনেক কষ্ট করে আইফোন ফিফটিন চালাচ্ছে। ভেবেছিলাম এবার ওকে আইফোন সিক্সটিন দেব। এত খরচ কীভাবে সামলাব? গরিবের দুঃখ কেউ বোঝে না রে ভাই।"

mm m

ঘুষ খাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জগলুলের শরীরেও প্রভাব পড়েছে। মুখ শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচে কালি। প্রায়ই টেবিলের নিচে কিছু খোঁজেন, কাজেও মন নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ‘হাইপোঘুষোমিয়া’ নামক এক ধরনের রোগের লক্ষণ। চিন্তার বিষয় হলো, জগলুলের মতো আরও অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় ঘুষ্টিবিদ বুলবুলি বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, "ঘুষে রয়েছে প্রচুর ঘুষ্টিকর উপাদান, যা পকেটের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। ঘুষ খেতে না পারলে পকেটের স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়া স্বাভাবিক এবং এর সঙ্গে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। ইদানীং ঘুষের বদলে মার খাওয়া, ধরা খাওয়া, লজ্জা-শরমের মাথা খাওয়া, এমনকি গণপিটুনি খাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। তাই ঘুষের বদলে ‘চা-পানি’ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।"

m mm

তিনি আরও বলেন, "চা-পানি তো ঘুষেরই আরেক নাম। অফিসে এই নামে ঘুষ নেওয়া হতো। এখন যেহেতু ঘুষ খাওয়া যাচ্ছে না, তাই আসল চা আর পানি খেয়ে দিন শুরু করতে পারেন।"

তবে শুধু ‘ঘুষো ডায়েট’ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। জীবনযাপনের ধরনেও আনতে হবে পরিবর্তন। বুলবুলি বলেন, "পরিমিত বেতন তুলে খাওয়ার অভ্যাস করুন, নিয়মিত হাঁটুন, এবং পাজেরোর বদলে নিজের পা-জোড়ার ওপর ভরসা রাখুন।"

এসব পরামর্শ জগলুল মিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়া হলে তিনি বলেন, "কী আর বলব ভাই, এখন তো আর Power নাই, তাই কিছু পাওয়ারও নাই।"

Post a Comment

0 Comments