এস আলম গ্রুপের ‘ব্যাংক লুটের’ কাহিনি-২
"টাকা বের করতে বাসার কেয়ারটেকারকে ব্যাংকের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছে।"
২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময়, তাদের তিন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটিতে ৩ হাজার ৬ কোটি টাকার ঋণ ছিল। সেই সময়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক ছিলেন সাইফুল আলম। কিন্তু মাত্র ৭ বছরের মধ্যে, ইসলামী ব্যাংক থেকে সরাসরি এবং বেনামে ঋণ নিয়ে এস আলম গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ব্যাংকের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এস আলমের ঋণের প্রকৃত অঙ্ক আরও বেশি হতে পারে, কারণ কিছু ঋণ এমন সব কোম্পানির নামে নেওয়া হয়েছে যেগুলোর অস্তিত্ব কেবল কাগজে-কলমে।
অভিযোগ উঠেছে, এস আলম গ্রুপ শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংকই নয়, আরও ছয়টি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজেদের পছন্দের লোকদের বসিয়ে একই কায়দায় বিপুল অর্থ বের করে নিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি আকিজ উদ্দিন ছিলেন তেমনই একজন কর্মকর্তা, যিনি একসময় সাইফুল আলমের বাসার কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন।
সূত্র জানায়, আকিজ উদ্দিন ছিলেন একজন অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। তিনি সাইফুল আলমের মন জয় করতে সক্ষম হন এবং দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি পদে পৌঁছান, যেখানে সাধারণত ২৪ থেকে ২৬ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে। আকিজ তার ক্ষমতা ব্যবহার করে জমির দালালি করে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যান।
ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি পদে বসার পর, আকিজ উদ্দিন মূলত এস আলম গ্রুপের সব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি ব্যাংক নিয়োগ, পদোন্নতি, ঋণ বিতরণ এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারাও তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাঠানো হয়। এস আলমের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে স্থায়ী হওয়ার পর, আকিজ উদ্দিন তার পক্ষে ব্যাংক পরিচালনা করতেন। আকিজ উদ্দিনের সিন্ডিকেট ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল করতো এবং সুদ মওকুফ করতো।
এস আলম গ্রুপের নামে ছয়টি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা জমা ছিল, যার মধ্যে বর্তমানে ২৬ হাজার কোটি টাকা বাকি রয়েছে। এনবিআর এবং অন্যান্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আকিজ উদ্দিন ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে বিদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন এবং দেশে বিপুল সম্পদ তৈরি করেছেন।
f
ff
বর্তমানে আকিজ উদ্দিন পলাতক রয়েছেন এবং ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে তিনি কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। তার সহকারী মিফতা উদ্দিন ও অন্যান্য সিন্ডিকেটের সদস্যরা এ কাজে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া সাইফুল আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীও এই সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।

0 Comments