"ঢাবিতে ৬ বছর ধরে ‘শিবির ট্যাগের মানসিক যন্ত্রণা’ সহ্য করেছি, তখন আপনি কোথায় ছিলেন?"

 "ঢাবিতে ৬ বছর ‘শিবির ট্যাগের ট্রমা’ নিয়ে বেঁচেছি, তখন আপনি কোথায় ছিলেন?"  


গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিভিন্ন অপকর্ম প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। একইসঙ্গে উঠে আসছে দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নির্যাতনের গল্পও। এমনই একটি নির্মম অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অ্যাটর্নি অ্যাট ল নিয়ে পড়াশোনা করছেন মাহমুদুল। তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই গল্পটি শেয়ার করেছেন। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমি তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় পড়েছি। দাখিল-আলিম শেষ করে ২০০৯-১০ সেশনে ঢাবির আইন বিভাগে ভর্তি হই। কোচিংয়ের জন্য ইউসিসির প্রসপেক্টাসে যে ছবিটি দেখছেন, সেখানে রামগঞ্জ সরকারি কলেজের নাম লেখা আছে। তবে আমি সেই কলেজের নাম ছাড়া আর কিছুই জানি না।”


তিনি আরও বলেন, “গ্রামের গরিব পরিবারের সন্তান হিসেবে হলে থাকার কোনো বিকল্প ছিল না। হলে ওঠার আগে মাদ্রাসার ছাত্রদের ওপর নির্যাতনের ভয়ংকর সব গল্প শুনেছিলাম—কাউকে দ্বিতীয় তলা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, কারো আঙ্গুলের নখ তুলে নেওয়া হয়েছে। বন্ধুদের পরামর্শে মাদ্রাসায় পড়েছি, সেটা না বলার পরামর্শ পাই। কারণ মাদ্রাসার ছাত্ররা সবসময় সন্দেহের তালিকায় থাকত।”


মাহমুদুল তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আরও জানান, “হলে ওঠার পর এক বড় ভাই আমাকে ছাত্রলীগের একজন নেতার কাছে নিয়ে গেল। সে শিবিরের ছাত্রদের নির্যাতনের গল্প শোনাতে লাগল। সেই মুহূর্ত থেকেই আমি আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। আমার পরিচয় গোপন করতে বাধ্য হলাম। পরিচয় লুকিয়ে, কোনোরকমে ছাত্রলীগের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিতে বাধ্য হলাম।”


“২০১০ সালের অক্টোবর মাসের এক রাতের ঘটনা, আমাদের রুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাতে চাপাতি ধরিয়ে দেয়া হলো। সেদিন কোনোভাবে পালাতে পারায় আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই মুহূর্তগুলো আজও আমার মনে গভীর ক্ষত হিসেবে রয়ে গেছে। পরের দিন খবর আসে—‘মুহসিন হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারি’।"

f ff

তিনি আরও বলেন, “আমার মাদ্রাসার পরিচয় গোপন করতে বাধ্য হওয়া মানে ছিল প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকা। কেউ জানলে, আমার জীবন বিপন্ন হতে পারত। এভাবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় বছর ‘শিবির ট্যাগের ট্রমা’ নিয়ে কাটিয়েছি। তখন আপনি কোথায় ছিলেন?”


মাহমুদুল তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে, “আমি গর্বিত যে আমি তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম। তবে এই ফ্যাসিবাদী শাসন এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আপনার মতো মানুষরা আমাকে যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে দিয়েছে, সেটা ভুলবো না।” 

Post a Comment

0 Comments