সরকার কি তাহলে পাল্টা বিপ্লবের সম্মুখীন?
বিপ্লবের ছায়াসঙ্গী সবসময়ই প্রতিবিপ্লব। যেখানে বিপ্লব ঘটে, সেখানেই প্রতিবিপ্লবের আলামত দেখা যায়। কখনো এটি সফল হয়, কখনো ব্যর্থ। বাংলাদেশের বিপ্লব নিয়েও এখন দেশ ও বিদেশে তুমুল আলোচনা চলছে। নানা ধরনের প্রচারণা এবং কৌশলও তৈরি হচ্ছে। সরকারের ভেতরে কিছু মহলও প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে। যদিও এর আগের অনেক পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে, তবে যারা পরাজিত, তারা থেমে নেই। বিজয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে তারা বলছে, "ক’দিন অপেক্ষা করুন!"
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা টগবগ করছে, অনেকেই বলছেন, প্রতিবিপ্লব এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এই মুক্ত যুগে এমন পরিস্থিতি অস্বাভাবিক নয়। ফিলিপাইনের বিপ্লবের পরও এমন কিছু ঘটেছিল।
তাহলে কি সরকার উদ্বিগ্ন? আমি এ নিয়ে প্রশ্ন রেখেছিলাম সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। তিনি বললেন, "এটা নতুন কিছু নয়। আমরা সবাই জানি এবং দেখছি। বিভিন্নভাবে সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে।"
আমি জানতে চাইলাম, "আপনি কি তাহলে চিন্তিত?"
তিনি সরাসরি বললেন, "আমরা চোখ-কান খোলা রেখেছি। যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নিচ্ছি।"
তাহলে কি বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লব অবশ্যম্ভাবী? ইতিহাস তো তাই বলে।
ড. ইউনূস বললেন, "আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। কিছু ভুল-ত্রুটি আছে, তবে সেগুলো ঠিক করে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে চাই।"
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "সেই লক্ষ্য কী?"
ff f
তিনি পাল্টা জিজ্ঞাসা করলেন, "এই প্রশ্ন কেন? আমরা তো বলেছি সংস্কার ও নির্বাচন চাই। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে থাকতে চাই না। আমার সব কাজ তো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তুমি জানো, আমি স্বপ্ন দেখি এবং স্বপ্ন দেখাই। কিন্তু এখন আমি আর কোনো স্বপ্নও দেখতে পারছি না। যেখানে আগে ছিলাম একজন মুক্ত মানুষ।"
আমি প্রশ্ন করলাম, "এখানে কি আপনি মুক্ত নন?"
তিনি উত্তর দিলেন, "মুক্ত কিনা জানি না, তবে ফাইলে বন্দি। প্রতিদিন আমাকে এন্তার ফাইলে সই করতে হয়। অন্য কাজের জন্য সময় পাওয়া খুবই কম, এটা সত্য।"
"সব ফাইল কি পড়তে হয়?"
"সব ফাইল পড়তে হয় না, কিন্তু সই করতে হয়। দুনিয়ার অনেক জায়গায় ফাইল উঠে গেছে, সবকিছুই ডিজিটাল হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো লাল ফিতার বাঁধনে আটকে আছি। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন কবে হবে, কে জানে!"
আমি তখন তার উপদেষ্টামণ্ডলী সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, "তোমার কী ধারণা?"
আমি বললাম, "আমার ধারণা বড় কথা নয়, মানুষ কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে।"
f ff
তিনি হাসলেন এবং বললেন, "ভালো-মন্দ সবই আছে। কেউ দুর্বল, কেউ সবল। আমি তাদের কাজ দেখছি, মানুষও দেখছে। একটি পর্যায়ে গিয়ে আমাকে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা কোন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তা সবার জানা। চারদিকে অস্থিরতা ছিল, আর মানুষ স্বস্তি চায়। নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে অন্য দিকে মোড় নিতে পারে। মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়।"
এভাবেই শেষ হলো ষাট মিনিটের আলোচনা।
0 Comments