চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং দখলদারিত্বের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই: ডা. শফিকুর রহমান
চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং দখলদারিত্বের সাথে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র আমির, ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “বিগত সরকারের আমলে ১৭ বছর ধরে আমরা বিভিন্ন ধরনের জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছি। যারা মানুষের খুন ও গুম করেছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত।”
তিনি আরও জানান, “সুনামগঞ্জ আমার একান্ত স্মৃতিবিজড়িত স্থান। এখানে প্রথম চাকরি শুরু করার পর কিছুদিন কর্মরত থাকার পর আমি দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।”
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “সুনামগঞ্জের বোরো ধান, বালু-পাথর, মাছ দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে। দেশের সবচেয়ে বড় মাদার ফিশারি টাঙ্গুয়া এখানেই অবস্থিত। সুনামগঞ্জে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, যা অতীতে কেউ কাজে লাগাতে পারেনি। কৃষি শিল্প, ইলেকট্রিক মেকানিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি এবং হিউম্যান ইন্ডাস্ট্রির সমন্বয়ে একটি স্বনির্ভর দেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “সুনামগঞ্জের কৃষি শিল্পকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। এখানকার খেটে খাওয়া মানুষের সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষা নিতে বিদেশে যায়। একসময় ব্রিটিশ, পর্তুগিজ এবং মোগলরা আমাদের দেশে আসত দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য। যদি আমাদের নেতৃত্ব সৎ হয়, দেশ ও জাতির কল্যাণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়, তবে দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।”
জামায়াত আমির উল্লেখ করেন, “আমাদের দলের পাঁচজন জাতীয় নেতাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাদের মৃত্যুর সময় তারা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ছিলেন। এসব ঘটনা অনেককে আবেগপ্রবণ করে তোলে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনামলে যারা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করেছে, তারা সৎ, ন্যায়পরায়ণ এবং মানবতার প্রতি নিষ্ঠাবান ছিল না। তাদের এই কার্যকলাপের কারণে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।”
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমাদের দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সব ধর্মের মানুষকে সম্মান করি এবং বাংলাদেশে কেউ মাইনরিটি বা মেজরিটি নয়, আমরা সবাই একযোগে এই দেশের নাগরিক। আমরা মিলে মিশে দেশকে নতুন রূপে সাজাতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিচার চাই, কিন্তু তা অবশ্যই ন্যায়সংগত হতে হবে। আমরা জাতিসংঘে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম যাতে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত করা হয়, কিন্তু এখনও তা হয়নি।”
তিনি দেশের মানুষকে সচেতন করে বলেন, “আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ চাই, যেখানে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে।”
এসময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, এবং অন্যান্য নেতারা।
0 Comments