‘ইসলামী ব্যাংকের এমডি কে না সরানোর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ’

‘ইসলামী ব্যাংকের এমডি কে না সরানোর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ’


 ইসলামী ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের সাথে এমডি মনিরুল মওলার জড়িত থাকার অভিযোগ, পদত্যাগের দাবি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ

দেশের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি থেকে কথিত ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের সাথে ব্যাংকটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মনিরুল মওলা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, তাকে পদ থেকে সরানোর বিষয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কাজ করছে বলে দাবি করেছেন স্টার্ক ব্যাংকার্স ফোরাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ।

তারা জানান, অভিযোগের পরও ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মনিরুল মওলার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। একইসাথে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।

 

শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্টার্ক ব্যাংকার্স ফোরামের উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম, আহ্বায়ক বি এম আনোয়ার হোসেন, ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আবুল কালাম আজাদ, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মনির হোসেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ ও বশির উদ্দিন প্রমুখ।

এক প্রশ্নের উত্তরে বি এম আনোয়ার বলেন, “আমরা দুর্নীতিবাজ এস আলম এবং মনিরুল মওলার বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় ব্যাংকের ভেতর ও বাইরে থেকে আমাদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই আমরা তাদের নাম প্রকাশ করবো। ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান এমডি মনিরুল মওলা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে সরাসরি জড়িত। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে, কিন্তু তাকে এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমরা এমডির অপসারণ ও তাকে গ্রেফতারের দাবিতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও দুদকে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু রহস্যজনকভাবে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না।”

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, “আমরা মনে করি, এর পেছনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে। গত বছরের ১১ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের সামনে একটি রাজনৈতিক দলের নেতার নেতৃত্বে গুলি করা হয়েছিল। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এর মাধ্যমে পরিষ্কার হয় যে, এখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি এস আলম কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে তাদের পেছনে।”

ff

স্টার্ক ব্যাংকার্স ফোরাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, “এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলেছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হল, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া উচিত এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুক্ত করতে হবে। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বি এম আনোয়ার বলেন, “বিদেশে পাচারকৃত বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের কষ্টার্জিত আমানত ইসলামী ব্যাংকের টাকাসহ ২৮ লাখ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনতে হবে। আমরা ইসলামী ব্যাংকের এমডি মনিরুল মওলার পদত্যাগের দাবি জানাই।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ডিপোজিট, এক্সপোর্ট, ইমপোর্ট, বিনিয়োগ, ফরেন রেমিটেন্স, মুনাফা ও সম্পদের গুণগত মানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যাংকটির সাফল্য নস্যাৎ করার জন্য একটি চক্র মাঠে নামে। এর শুরু ২০১০ সালে, যখন ব্যাংকের পর্যবেক্ষক হিসেবে একজন সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১2-2014 সালের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয় এবং বিদেশী শেয়ারহোল্ডারদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়।

২০১7 সালের জানুয়ারিতে, এস আলম গ্রুপ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সহায়তায় ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়। স্টার্ক ব্যাংকার্স ফোরামের আহ্বায়ক বি এম আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিদেশে পাচারকৃত বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের কষ্টার্জিত আমানত ইসলামী ব্যাংকের ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকাসহ ২৮ লাখ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনতে হবে। অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের অযোগ্য ও অবৈধ নিয়োগ বাতিল করতে হবে এবং যোগ্য তরুণদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।”

Post a Comment

0 Comments