‘গণপরিষদ’ এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’: সামনে আসছে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর মতপার্থক্য
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং ইসলামী দলগুলোর মতপার্থক্য
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সঙ্গে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ মূলধারার ইসলামপন্থী দলগুলোর অনেক বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও, ‘গণপরিষদ’ গঠন ও ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নতুন দলের জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যে রাজনৈতিক লক্ষ্য প্রকাশ করেছে, তাতে সবার মধ্যে একমতিভাব নেই।
জামায়াত মনে করে, ‘গণপরিষদ’ ও ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ কীভাবে হবে, সে বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়নি। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ দেশের মধ্যে বিতর্ক তৈরি করতে পারে এবং এর ফলে নির্বাচনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে, সংবিধানের ব্যাপক সংস্কারের জন্য ‘গণপরিষদ’ হতে পারে এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’-এর প্রতিষ্ঠা নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে তাদের উদ্বেগ, এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে যেন জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে কোনো অনিশ্চয়তা সৃষ্টি না হয়।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন, সহ অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে ছাত্রনেতৃত্বের সঙ্গে বড় ধরনের মতবিরোধ দেখা যায়নি। তবে এখন ‘গণপরিষদ’ এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ নিয়ে কিছু মতপার্থক্য সামনে আসছে।
এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার যাতে পুনরায় না আসতে পারে, তার জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সংবিধানে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। এনসিপির মতে, এই সংস্কারের জন্য ‘গণপরিষদ’ নির্বাচন এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এই বিষয়ে বলেন, “তারা কিছু শব্দ ব্যবহার করেছে (গণপরিষদ, সেকেন্ড রিপাবলিক), কিন্তু এগুলো কীভাবে হবে তার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। আমরা মনে করি, এ মুহূর্তে এগুলোর মাধ্যমে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে, যা নির্বাচনে বিলম্ব এবং দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে।”
ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ‘গণপরিষদ’ গঠন এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠায় নীতিগতভাবে একমত, তবে তাদের সতর্কবার্তা হচ্ছে, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে যেন নতুন কোনো সংকট সৃষ্টি না হয় এবং জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংস্কার প্রয়োজন। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করতে হবে।”
জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের অবস্থান
ধর্মভিত্তিক দলের মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অবস্থান আলাদা। দলটি ছাত্রদের ‘গণপরিষদ’ এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’-এর মতো তাত্ত্বিক বিষয়ে সম্পৃক্ত হতে চায় না। জমিয়ত মনে করে, দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা সংশোধনের জন্য জরুরি সংস্কার করা উচিত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
বিএনপি এবং অন্যান্য দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
f ff
বিএনপি মনে করছে, ছাত্রদের নতুন তৎপরতা এবং ‘গণপরিষদ’ ও ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা হতে পারে।
তবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের দুর্বলতা সবার কাছে দৃশ্যমান। যদি সংস্কারের জন্য নির্বাচন কিছুটা বিলম্বিত হয়, তবে সেটি দেশের স্বার্থে মেনে নিতে প্রস্তুত আছি।”
এই সব মতপার্থক্য এবং রাজনৈতিক চিন্তাধারা দেশে বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব পূর্ণ অবদান রাখতে চলেছে।
0 Comments