বিদ্রোহী কর্মকর্তাদের হাতে ইসলামী ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার কতটুকু নিরাপদ

 বিদ্রোহী কর্মকর্তাদের হাতে ইসলামী ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার কতটুকু নিরাপদ

অনেকে এখন মনে করছেন, ইসলামি ব্যাংকের বিদ্রোহী কর্মকর্তাদের কারণে গ্রাহকদের টাকা এবং ক্যাশ কাউন্টার নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। তারা ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্রোহ শুরু করেছে; এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ভল্ট কিংবা ক্যাশ কাউন্টার কোনোভাবেই সুরক্ষিত অবস্থায় আছে বলেই ভাবা যায় না। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বিষয় দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে ব্যাংক শীঘ্রই ভয়াবহ বিপদে পড়বে।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ইসলামী ব্যাংকের ফেসবুক পেইজ হ্যাক হওয়া খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। অনেকেই ধারণা করছে, এই হামলা এস আলমের সময় নিয়োগ করা আওয়ামী লীগের সম্বন্ধিত সন্ত্রাসীদের কোনো কর্মকাণ্ড।

অজ্ঞাতবাবে জানা গেছে, এস আলম ব্যাংক দখল নেওয়ার পর এখানে একটি ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা শুরু হয়। পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ব্যাংকের সেবা ও সুনাম ধ্বংস করতে অশিক্ষিত ও অর্ধ-শিক্ষিত কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়—যেমন: পটিয়ার পানের দোকানদার, বাড়ির কাজের বুয়া, অটোচালক, রাজমিস্ত্রির সহকারী, রংমিস্ত্রি ইত্যাদি। নিয়োগ হয় বিজ্ঞাপন বা পরীক্ষার কোনো প্রক্রিয়া ছাড়াই, বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে—এইভাবে প্রায় ৮৩৪০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

এই কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবহার করেছিলেন। ইসলামী ব্যাংক ইতিমধ্যে বেশ কিছু ভুয়া সার্টিফিকেটধারী কর্মীকে বহিষ্কার করেছে, এবং সার্টিফিকেট যাচাই প্রক্রিয়া এখনও চলমান। সম্প্রতি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষ দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা নিয়েছিলেন তাদের যোগ্যতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য, কিন্তু প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা তা বয়কট করে এবং অবাধ্যতার পরিচয় দেয়।

তারপর তারা ব্যাংকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন অপপ্রচার শুরু করে, বর্তমান ম্যানেজমেন্টকে হুমকি দিচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের একটি অংশ হিসেবে শুক্রবার ভোরে ব্যাংকের ফেসবুক পেইজ হ্যাক করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, কতিপয় সন্ত্রাসীর প্ররোচনায় তারা এসব কাজ করছে।

গত কয়েক বছরে শুধুমাত্র চট্টগ্রামের লোক নিয়োগ দেওয়ায় ব্যাংক অনেকটা আঞ্চলিক ব্যাংকের মতো হয়ে গেছে। অফিসে সব সময় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা হয়। নানা তাগাদা সত্ত্বেও তারা নিজেদের পরিবর্তন করেনি, বরং উদ্ধত আচরণ বাড়িয়েছে। গ্রাহক সেবার মান অনেকটাই খারাপ হয়েছে, এবং ইসলামী ব্যাংকের পুরাতন সুনাম প্রায় বিলুপ্তির পথে।

f ff

এস আলমের নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের অধিকাংশের পেশাগত দক্ষতা তেমন ছিল না। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো চলতেন, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ না মানা, কেলিগদের সাথে দুর্ব্যবহার—এসব ছিল নিয়মিত ঘটনা। নিজের পছন্দমতো এলাকায় বদলি হওয়া, অফিস সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে ইচ্ছের বিরোধিতা হলে মিথ্যা অভিযোগ, চাকরির হুমকি ইত্যাদির ঘটনা প্রচলিত।

এরা শুধু গ্রাহক ও সাধারণ জনতার মধ্যে নয়, ব্যাংকের ম্যানেজার, জোনাল হেডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও আতঙ্কে রাখে। তারা এখনও হুমকি দিচ্ছে, জাতীয় নির্বাচন শেষে আবার এস আলমসহ আগের অবস্থায় ফিরে আসবেন বলে।

ঐ সব অবৈধ নিয়োগের কারণে ব্যাংকের ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা বা তারও বেশি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। সাত বছরে এই ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। একদিকে ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা লোপাট, অন্যদিকে অবৈধ নিয়োগের বোঝা—এগুলি ব্যাংকের সামনে অতিকষ্টকর একটি অবস্থা তৈরি করেছে।

অনেকে বলছেন, অবৈধ নিয়োগ ও টাকার লুটের কারণে ব্যাংক খাত ধ্বংসের পথে রয়েছে। সম্প্রতি একটি টকশোতে সিটি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মাসরুর আরেফিন বলেছেন, “এস আলম একাই পুরো ব্যাংক খাত ধ্বংস করেছেন।”

একজন গ্রাহক, আমিনুল ইসলাম, তার ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন করেছেন: “পটিয়ার অবৈধ ব্যাংকাররা চাকরি রক্ষার আন্দোলন করলে কেন তারা এস আলমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন না, যিনি ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন—তার টাকা ফিরিয়ে আনার আন্দোলন কেন করা হচ্ছে না?”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্রোহী কর্মকর্তাদের হাতে এখন গ্রাহকের টাকা কোনওভাবে নিরাপদ নয়। যদি এদের নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, ব্যাংক খুব দ্রুত গুরূতর বিপদে পড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো অফিসিয়াল বক্তব্য নেই, তারা জানান—যদি ব্যাংক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কাজ চালিয়ে যায়, তাহলে সাধারণ গ্রাহক ও দেশের ব্যাংক খাতের প্রতি ভুল ধারণা সৃষ্টি হবে। দ্রুত একটি কার্যকরী সমাধানের প্রয়োজন।


Post a Comment

0 Comments