অবৈধ’ নিয়োগে সংকটে ইসলামী ব্যাংকের সুশাসন।
ব্যাংকের মতো বেশ কয়েকটি ব্যাংকে — বিশেষ করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে — পরীক্ষা ছাড়াই বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগ করা হয়। অনেকেরই ছিল না প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, দক্ষতা, এমনকি ভদ্রতা পর্যন্ত; নিয়োগ হয়েছে শিল্প মালিক বা রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশে, যার কারণে এসব কর্মীর দাপট ছিল আলাদা।
এস আলমসহ নানা নেতা-স্বীকৃতি পেয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই ছিলেন এক-এক এলাকাজনিত। তাদের মূল্যায়ন পরীক্ষার প্রস্তাবনা করতে গিয়ে ব্যাংকগুলিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকসহ সার্বিক ব্যাংকখাতে তৈরি হয়েছে অস্থির অবস্থা।
পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবেই পরিচিত সাইফুল আলম, অর্থাৎ এস আলম, তৎকালীন গণভবন থেকে এই দখলের সুযোগ পান। সাতটি ব্যাংক দখল হয়, এবং এসব ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া প্রায় ৩১,০০০ জনের অধিকের অধিকাংশই এস আলমের নিজ উপজেলা পটিয়ায় নিবাসী। ‘জাদুর বাক্সে’ সিভি ড্রপ করেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। একটি সাবেক গভর্নরের সুপারিশে আরও প্রায় ২,৯০০ জন নিয়োগের কথা রয়েছে; গভর্নরই এস আলমকে ব্যাংক দখল, ঋণ নিরোধক অবস্থা ও অন্যান্য সুবিধার অনুমতি দিয়েছিলেন।
ইসলামী ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২১,০০০। ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১১,০০০ জন, যাদের অধিকাংশের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই; নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা মূল্যায়ন পরীক্ষা হয়নি। চট্টগ্রাম জেলার অন্তত ৭,২২৪ জন এই ধরণের নিয়োগপ্রাপ্ত; তাদের মধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের নিজ পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা প্রায় ৪,৫২৪ জন। ঐ সময় ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
f ff
দ্রষ্টব্য, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মীর বেতনের উপর বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে; ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই খাতে ব্যয়প্রায় ২,৮০০ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নিয়োগ, বেতন-ভাতা আদায় ও খরচ আইনি নয়; তাই এগুলো ফেরত পাওয়া উচিত।
“অনেকের একাডেমিক সনদ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে,” ব্যাংক বলছে, এবং সব সনদের যাচাইকরণে উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্বীকৃতি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে নতুন পর্ষদ গঠন করে। পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর প্রায় ৫,০০০ কর্মীর মান যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষা আয়োজন করা হয়; যারা অফিসিয়াল দায়িত্বে ছিলেন, যেমন জুনিয়র অফিসার থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) পর্যায়ের কর্মীরা।
মানবসম্পদ বিভাগ আগস্টের মধ্যে একটি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করলেও, মামলা ও আদালতের হস্তক্ষেপে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয়নি অনেকেই; যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা নিয়মিত কাজ করেছেন। পরবর্তীতে ২০০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, বাকি অনেককে তাদের কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
বহু কর্মী অভিযোগ করেছেন, আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছে, যা আদালতের নির্দেশের পরিপন্থী।
ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, যে কর্মীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি তারা কর্মবিধি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন, এবং অনেকে ওএসডি (অন সার্ভিস ডিউটি) অবস্থায় আছেন — অর্থাৎ বেতন পাবেন, কিন্তু দায়িত্ব থাকবে না।
0 Comments