ব্যাংকে স্থায়ী আমানত সবচেয়ে বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও এনজিওদের, একেবারেই কম গণমাধ্যমের
দেশের ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিসংখ্যান প্রতি ত্রৈমাসিকে প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তার প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) বিভিন্ন খাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। প্রতিবেদনে জানা গেছে, জুন পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে মোট ৯ লক্ষ ৪১ হাজার কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে। এর মধ্যে:
-
সরকারি খাতের স্থায়ী আমানত প্রায় ১ লক্ষ ৮২ হাজার কোটি টাকা,
-
বেসরকারি খাতের স্থায়ী আমানত প্রায় ৭ লক্ষ ৫৯ হাজার কোটি টাকা।
বেসরকারি খাতের মধ্যে ব্যক্তি খাতের অংশ সবচেয়ে বড় — ৫ লাখ ৪৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। ব্যক্তিখাত বাদ দিলে, ৭৬ হাজার ২৪৩ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর। এরপর অবস্থান করে এনজিও খাত। জনসংযোগ মাধ্যমে স্থায়ী আমানত প্রায় নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, শিল্পখাতে যে পরিমাণ স্থায়ী আমানত আছে, তার বড় অংশ উৎপাদনমুখী শিল্পখাত থেকে আসে — প্রায় ৪০ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুন প্রান্তিকে এই খাতের আমানত ছিল ৩৪ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা, অর্থাৎ এক বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের জুনে এই খাতের আমানত ছিল ৩৪,১২৫ কোটি টাকা, ২০২৩ সালের জুনে বেড়ে হল ৩৪,৭০৫ কোটি টাকা।
f ff
গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর, ২০২৪ সালের জুন প্রান্তিক থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে উৎপাদনশীল খাতের স্থায়ী আমানত হুট করে বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৮ হাজার ৫৮২ কোটি টাকায়। এরপর থেকে প্রতি প্রান্তিকে এটি বাড়তেই থাকে। চলতি বছরের জুনে পৌঁছেছে ৪০,৬০৯ কোটি টাকার উচ্চমাত্রায়।
ব্যাংকের নির্বাহী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ সংকটে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ায়, যা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে শিথিলতা তৈরি করেছে। ঋণের সুদ বাড়ার পাশাপাশি আমানতের সুদও বাড়ছে, ফলে করপোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকে মেয়াদি আমানত হিসেবে রাখছে। এই প্রবণতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে স্পষ্ট।
নিচে অন্যান্য খাতগুলোর তথ্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
-
এনজিও: মোট স্থায়ী আমানত ≈ ২৮ হাজার ৩ কোটি টাকার
-
সেবা খাত (বাণিজ্য, আইটি সার্ভিস, অন্যান্য করপোরেট সেবা): ≈ ২৬ হাজার কোটি টাকা
-
খুচরা ব্যবসায়ী: ≈ ১৫ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা
-
পেনশন/প্রভিডেন্ট ফান্ড: ≈ ১৩ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা
-
আমদানি ও রফতানিকারক: ≈ ৭ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: ≈ ১০ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা
–其中 বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: ২ হাজার ৬১০ কোটি
–স্কুল/কলেজ/মাদ্রাসা: ৬ হাজার ৯০৫ কোটি -
গণমাধ্যম খাত: মাত্র ১১৬ কোটি টাকা (প্রিন্ট: ২১ কোটি, টিভি: ৩৮ কোটি, অনলাইন নিউজ: ৫৬ কোটি, রেডিও: ৩১ লাখ)
এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়:
-
ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশন ফিক্সড ডিপোজিট: ≈ ৬২ হাজার ৪০ কোটি টাকা
-
নন-ব্যাংক ডিপোজিটরি করপোরেশন (বেসরকারি): ≈ ৯ হাজার ৩২ কোটি টাকা
– লিজিং কোম্পানি: ১,৬৮৮ কোটি
– কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক: ৫০ কোটি
– ভূমি বন্ধক সমবায় ব্যাংক: ১০৭ কোটি
– অন্যান্য সমবায় ব্যাংক/সমিতি: ২,২৭২ কোটি (এদের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক: ৪,৭০৫ কোটি) -
আর্থিক সহায়ক প্রতিষ্ঠান: মোট ≈ ২,৭০৭ কোটি টাকা
– মানি চেঞ্জার: ২৪ কোটি
– শেয়ারবাজার (ডিএসই/সিএসই): ৯৮২ কোটি
– ব্রোকারেজ ও ট্রেডিং হাউজ: ১,০৫০ কোটি
– বিকাশ ও অন্যান্য: ৫৯১ কোটি
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, “বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান প্রায় থমকে আছে। কিছু শিল্পযন্ত্রাংশ অনুমোদন বা আমদানি হচ্ছে না। অর্থনৈতিক স্থবিরতার প্রভাবে দুই–তিন বছর পর সমস্যা আরও প্রকট হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধের পথে। তখন তাদের পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে।”
ব্যবসায়ীরা দাবি তুলেছেন, বেসরকারি খাতে পুনরায় গতি ফিরাতে ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার এক অংকে নেমে আসা প্রয়োজন। গত বৃহস্পতিবারই এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ঋণের সুদহার কমানোর দাবি উপস্থাপন করেছেন।
0 Comments