মানবতাবিরোধী অপরাধে দায় নেই, বিবিসিকে শেখ হাসিনা
গত বছর জুলাইয়ের আন্দোলনে প্রাণঘাতী দমন–পীড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কয়েক দিনের মধ্যেই বিশেষ ট্রাইব্যুনালের এ মামলার রায় ঘোষণার কথা। তার আগেই বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
অভিযোগ রয়েছে—নিজের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে সংঘটিত শতাধিক হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন হাসিনা। তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার পর ইমেইলের মাধ্যমে বিবিসিকে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার অনুপস্থিতিতে যে বিচার চলছে, তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত “ক্যাঙ্গারু কোর্টের সাজানো প্রহসন”।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সোমবার দোষী সাব্যস্ত হলে তার জন্য মৃত্যুদণ্ড চাওয়ার আবেদন ইতোমধ্যে করা হয়েছে।
হাসিনার দাবি, বিচার প্রক্রিয়া শুরু থেকেই “পূর্বনির্ধারিত দোষী সাব্যস্ত রায়ের” দিকে এগোচ্ছিল।
সোমবারের রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকার ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ রায় যেমন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ছাত্রনেতৃত্বের আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের কাছেও তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারীরা বলছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টায় হাসিনার সরকারের পরিকল্পিত সহিংসতায় সর্বোচ্চ ১,৪০০ মানুষ নিহত হন।
ভারত থেকে দেশে ফিরে বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানানো হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ—দেশত্যাগের আগের কয়েক সপ্তাহে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
f ff
হাসিনা বলেন, এসব অভিযোগ তিনি “সুস্পষ্টভাবে” অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, “আমি অস্বীকার করছি না যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, কিংবা অপ্রয়োজনে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ আমি কখনও দিইনি।”
বছরের শুরুতে ফাঁস হওয়া একটি টেলিফোন আলাপের অডিও বিবিসি যাচাই করে, যেখানে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে “প্রাণঘাতী অস্ত্র” ব্যবহারের অনুমোদনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আদালতে সেই অডিওও উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ বছরের জুলাইয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ কামালের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে। মামুন তার ভূমিকার জন্য দোষ স্বীকার করলেও এখনও সাজার রায় হয়নি।
বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে হাসিনার অভিযোগ—তিনি নিজের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ পাননি এবং স্বাধীনভাবে আইনজীবী নিয়োগ করতেও পারেননি।
তার দাবি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আওয়ামী লীগকে “চূড়ান্তভাবে নিশ্চিহ্ন” করতে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
সোমবার তার আইনজীবীরা জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ন্যায়বিচার নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ জানিয়ে তারা জাতিসংঘে জরুরি আপিল করেছেন।
আগামী ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিবিসি—যার আরেকটি মামলায়ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেন হাসিনা।
হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে কয়েকটি গোপন কারাগারের সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে বহু বছর ধরে কোনও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বন্দিদের আটক রাখা হয়েছিল। এসব কারাগারে অপহৃত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হত্যা করার অভিযোগও রয়েছে।
দায় কার ওপর—এমন প্রশ্নে হাসিনা বলেন, এসব বিষয়ে তিনি “জানতেন না”।
বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের দায়ে তার ভূমিকা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন। তার ভাষায়, “কোনো কর্মকর্তার অপব্যবহারের প্রমাণ থাকলে, তা যেন নিরপেক্ষ ও রাজনীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় তদন্ত করা হয়।”
হাসিনা এবং তার সাবেক সরকারের আরও জ্যেষ্ঠ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক মামলাও বিচারাধীন, যা তারা অস্বীকার করে আসছেন।
0 Comments