‘একজন দুইজন তো না, হাজার হাজার দুর্নীতিবাজ৷

 ‘একজন দুইজন তো না, হাজার হাজার দুর্নীতিবা .....জহুরুল হক


### দুর্নীতি দমন কমিশনের ভূমিকা


দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? দুদকের কমিশনার জহুরুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "একজন দুইজন নয়, হাজার হাজার দুর্নীতিবাজ। আপনারা সাংবাদিকরা না লিখলে আমরা জানতেও পারি না। আমরা কয়জনের দুর্নীতি বের করব? যাদের দুর্নীতির তথ্য আসে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেই।” 

বেনামে সম্পদের বিষয়ে দুদক কমিশনার বলেন, "আমাদের অত জনবল নেই যে, প্রত্যেককে ধরে তদন্ত করব। কোনো না কোনো সোর্স থেকে অভিযোগ আসতে হবে, তখনই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। এখনো আমাদের কাছে ৪-৫ হাজার অভিযোগ জমা আছে।”


### সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা


দুর্নীতির তথ্য পেতে দুদক সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সংবাদ মাধ্যম কি সঠিকভাবে দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করছে? ‘কালের কন্ঠ’-এর অনুসন্ধানী সেলের প্রধান হায়দার আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, “দুর্নীতির খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক বাধা আছে। পত্রিকা অফিস সময় ও সাপোর্ট দিতে চায় না। দুদিন পরপর জানতে চায় রিপোর্ট হয়নি কেন। অথচ রিপোর্ট করতে এক মাসও লাগতে পারে। সব ব্যক্তির দুর্নীতির খবর প্রকাশও সব সময় সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে মালিক পক্ষের চাপ আসে রিপোর্ট বন্ধ করতে। সব গণমাধ্যমে না হলেও কিছু গণমাধ্যমে এটা হয়।”

a aa

দুর্নীতির রিপোর্ট করার জন্য দক্ষ সাংবাদিক তৈরি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে হায়দার আলী বলেন, "দুর্নীতির রিপোর্ট করতে কী ধরনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে, সেটা আমরা সবসময় জানি না। এজন্য সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব আছে। দুর্নীতির রিপোর্ট প্রয়োজনের তুলনায় কম হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক গণমাধ্যম দুর্নীতির রিপোর্টকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কিছু কিছু ছাপা হচ্ছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে দুর্নীতি বিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আরও এগিয়ে যাবে।”


### আয়কর রিটার্ন এবং তদন্ত


সরকারি কর্মকর্তা থেকে সাধারণ মানুষের সবারই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার কথা। সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের বিবরণ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নেয় না? রাজস্ব বিভাগের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের সাবেক প্রধান ও সাবেক কমিশনার (ট্যাক্স পলিসি) ড. সৈয়দ মোহাম্মদ আমিনুল করিম বলেন, "লাখ লাখ আয়কর ফাইলের সবগুলো পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। যাদের আগের বছরের সম্পদের সঙ্গে পরের বছরের বড় পার্থক্য আছে, তাদের ফাইল পরীক্ষা করা হয়। সন্দেহ হলে সেগুলো সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটে পাঠানো হয়।”


### হুইসেল ব্লোয়ার প্রোটেকশন অ্যাক্ট-২০১০

a aa

দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী সরকারি কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দিতে ‘হুইসেল ব্লোয়ার প্রোটেকশন অ্যাক্ট-২০১০' করা হয়েছে। তবে আইন থাকা সত্ত্বেও অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 


ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)-র সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার দুর্নীতির তথ্য সাংবাদিককে দেওয়ায় গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জিসানুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।


সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, "আইনটি হওয়ার ১৩ বছর পরও কেউ তথ্য দিতে চান না। কারণ আমরা তথ্যদাতাকে সুরক্ষা দিতে পারছি না। তথ্যদাতাকে সুরক্ষা দিতে না পারলে দুর্নীতির খবর সামনে আসবে না।”


### অবৈধ সম্পদ এবং দুদকের ব্যবস্থা

a aa

কারও অবৈধ সম্পদের তথ্য সংবাদ মাধ্যমে আসার পরও অনেক ক্ষেত্রে দুদক ব্যবস্থা নিতে দেরি করে। সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে প্রথম রিপোর্ট ছাপা হয় ৩১ মার্চ। তিনি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদেশে যান। পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় দুদক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ট্রাষ্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, "রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেউ দুর্নীতি করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা যদি ব্যবস্থা নিতে চাই তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। দুর্নীতি দমনে ছাড় দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। সরকার কঠোর হলেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।”

Post a Comment

0 Comments