ব্রিটেনে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গাজাপন্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন লেবার প্রার্থীরাও।

ব্রিটেনে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গাজাপন্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন লেবার প্রার্থীরাও।

ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি জিতলেও দলটির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু এলাকায় তাদের প্রার্থীরা গাজাপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এছাড়াও, অনেক এলাকায় তারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন।

দলটির জন্য বড় আঘাত হলো শ্যাডো মিনিস্টার জনাথন অ্যাশওয়ার্থের লেস্টার সাউথ আসনে পরাজয়, যেখানে তিনি আগে প্রায় ২২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন।

১০ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোটার আছে এমন আসনগুলোতে লেবার পার্টির ভোট গড়ে ১১ শতাংশ কমেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইলফোর্ড নর্থে শ্যাডো স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিংয়ের জয়ের পার্থক্য ৯ হাজার ভোট থেকে কমে মাত্র ৫২৮ ভোটে দাঁড়িয়েছে।
তবে লেবার প্রার্থী পল ওয়াহ রোচডেলের আসন পুনরুদ্ধার করেছেন, যা আগে জর্জ গ্যালাওয়ে দখলে ছিল। মুসলিম ভোটার বেশি আছে এমন আসনগুলোতে লেবার খারাপ করেছে। পাঁচটি আসনে লেবার হেরে গেছে, এর মধ্যে চারটিতে স্বতন্ত্র এবং একটিতে কনজারভেটিভ প্রার্থী জয়ী হয়েছে।

লেস্টার সাউথ আসনে শোকাত অ্যাডাম ৯৭৯ ভোটে জয়ের পর ঘোষণা করেছেন ‘এটা গাজার জন্য’।


### নির্বাচনী ফলাফল ও বিশ্লেষণ:
এই আসনে ৩০ শতাংশ ভোটার মুসলিম। ১৩ বছর ধরে জনাথন অ্যাশওয়ার্থ আসনটি ধরে রেখেছিলেন। লেস্টার ইস্ট আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কনজারভেটিভ প্রার্থীর জয়ে সহায়তা করেছে, বিশেষ করে সাবেক লেবার এমপি ক্লাউডিয়া ওয়েব্বের এলাকায়।

বার্মিংহামের পেরি বার এলাকা লেবারের খালিদ মাহমুদ ৫৭০ ভোটে হেরে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়ুব খানের কাছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা গাজাকে তাদের প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে ডিউজবুরি, বাটলে, এবং ব্ল্যাকবার্ন এলাকায় জয়ী হয়েছেন।

মুসলিম জনগোষ্ঠী বেশ বড় এমন আরও কিছু এলাকায় সিনিয়র লেবার নেতারা খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতে পেরেছেন। ইলফোর্ড নর্থে স্বতন্ত্র প্রার্থী লিয়ানে মোহামাদ, যিনি একজন ফিলিস্তিনি শরণার্থীর নাতি, ওয়েস স্ট্রিটিংয়ের চেয়ে ৫২৮ ভোট পেছনে ছিলেন।

বার্মিংহাম লেডিউডে ছায়া বিচারমন্ত্রী শাবানা মাহমুদকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আইনজীবী আহমেদ ইয়াকুব। শাবানা মাহমুদের জয়ের পার্থক্য ৩২ হাজার থেকে কমে ৩৪২১ ভোটে দাঁড়িয়েছে।

জেস ফিলিপস, যিনি পার্লামেন্টে গাজার যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য লেবার পার্টির সামনের সারি ছেড়ে দিয়েছিলেন, এবার ৬৯৩ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। তার প্রচারকর্মীরা বাধা ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
aaa
পূর্ব লন্ডনের বেথানল গ্রিন অ্যান্ড স্টেফনি আসনে ছায়ামন্ত্রী রুশনারা আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুরকে ১৬৯৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।

নাইজেল ফারাজ প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণার সময় লেবার নেতা স্যার কিয়ের স্টারমার ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ প্ল্যাকার্ডের মুখোমুখি হয়েছেন এবং তার ভোটের ব্যবধান কমেছে। গাজাপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী এন্ড্রু ফেইনস্টেইন পেয়েছেন ৭৩১২ ভোট।

ইসলিংটন নর্থ আসনে সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছেন। তিনি লেবার প্রার্থীর চেয়ে সাত হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। এন্টিসেমিটিজম বিষয়ক এক রিপোর্টে প্রতিক্রিয়ার কারণে দলে তার সদস্যপদ স্থগিত হয়েছিল।

গাজা দ্বন্দ্বের বিষয়ে অবস্থানের জন্য লেবার পার্টির ওপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। ইসরায়েলে গত সাতই অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছিল লেবার, তবে সমালোচকদের মতে পার্টির এই অবস্থানে পৌঁছার গতি ছিল খুবই ধীর। লেবার নির্বাচনী ইশতেহারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। গত বছর স্যার কিয়েরের বক্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল, যখন তিনি বলেছিলেন ইসরায়েলের গাজায় পানি ও জ্বালানি বিচ্ছিন্ন করার ‘অধিকার’ আছে। পরে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন যে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন দেশটির আত্মরক্ষার অধিকার আছে।

Post a Comment

0 Comments