সকালে তোর সাথে কথা হয়েছিল, আর দুপুরেই তুই আমার জীবন থেকে চলে গেলি! এতো তাড়াতাড়ি কি করে?
শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন ছিল মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। আমি ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন প্রকৌশল বিভাগে। ভীষণ পরোপকারী ছিল ইয়ামিন। পরীক্ষার আগের রাতেও কেউ সমস্যা নিয়ে এলে সময় দিয়ে সেটার সমাধান করে দিত। সারা দিন ল্যাপটপ নিয়ে থাকত। কিন্তু একবার ওর সঙ্গে আমার আড্ডা শুরু হলে চলত ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
আমার দেখা অনন্যসাধারণ মানুষদের মধ্যে একজন ইয়ামিন। শুধু ওর অ্যালার্মগুলো ছিল জঘন্য। ও বাদে রুমের সবার ঘুম ভেঙে যেত। চলাফেরা ছিল খুব সাধারণ। গেমিংয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল। বলত, এটা ওর ভাবনার সক্ষমতা বাড়ায়। ঘর থেকে খুব একটা বের হতো না। নিজের মতোই ল্যাপটপ নিয়ে থাকত।
চতুর্থ বর্ষেও আমরা একসঙ্গে উঠলাম। ওর সঙ্গে আমার চিন্তাভাবনার অনেক মিল ছিল। ও সব আমার সঙ্গে শেয়ার করত, আমিও আমার সমস্যাগুলোর কথা বলতাম। ইয়ামিনের কাছ থেকে সব সময় বাস্তবসম্মত (প্র্যাকটিক্যাল) উত্তর পেতাম। তাই ওকে বানিয়েছিলাম আমার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা।
কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক—এই জ্ঞান ছিল খুব ভালো। স্কুল-কলেজে সেরা ছাত্র ছিল। উচ্চমাধ্যমিকের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। বুয়েটে ভর্তি হয়নি, কারণ, ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে ছাত্ররাজনীতি করতে চায়নি। তবে এমআইএসটি ডিবেট ক্লাব, সাইবার ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিল। প্রোগ্রামিংয়ে তুখোড় ছিল। কে কত দ্রুত রুবিকস কিউব মেলাতে পারি, এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো। ইয়ামিন সব সময় আগে মিলিয়ে ফেলত। ইয়ামিনের আব্বু পড়ালেখার জন্য ওকে দেশের বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে রাজি ছিল না। ইয়ামিন চাইত দেশেই কিছু করবে।
0 Comments