ইসলামী ব্যাংকে যাদের ওপর সবচেয়ে বেশি জুলুম হয়েছে, তারাই হল আরডিএস-এর জনশক্তি, যারা সবচাইতে বেশি মজলুম।

ইসলামী ব্যাংকে যাদের ওপর সবচেয়ে বেশি জুলুম হয়েছে, তারাই হল আরডিএস-এর জনশক্তি, যারা সবচাইতে বেশি মজলুম।


**ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির Rural Development Scheme (RDS) সম্পর্কে**


ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রকল্প হলো আরডিএস বা পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার দুটি মূল উদ্দেশ্য ছিল:


1. সুদমুক্ত এবং শরিয়া ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

2. কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তন করা।


ইসলামী ব্যাংকের স্লোগান হচ্ছে "ইসলামী ব্যাংক কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তক"।


ইসলামী ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং ব্যাংকের জন্ম থেকে যে স্লোগান "কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তক", তার সঠিক বাস্তবায়ন আরডিএস প্রকল্পের মাধ্যমেই হয়ে আসছে। আরডিএস প্রকল্প বাদ দিলে ইসলামী ব্যাংক এবং অন্য কোনো প্রচলিত ব্যাংকের মধ্যে শরিয়া ছাড়া আর কোনো পার্থক্য থাকবে না।


বর্তমান বিশ্বে ধনী ব্যক্তিদের সেবা দেওয়ার জন্য অনেক ব্যাংক আছে, তবে দেশের ৯০ শতাংশ দরিদ্র, সাধারণ মানুষ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবার জন্য ব্যাংক নেই বললেই চলে। এজন্যই মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জনাব ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস স্যারের গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণের প্রবর্তন করে এত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং বিশ্বব্যাপী নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। আমরা এ জন্য গর্বিত যে, আমাদের দেশ প্রশংসিত। যদি ইসলামী ব্যাংক কখনো আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নোবেল পুরস্কার পায়, তবে তা শুধুমাত্র আরডিএস বা পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যই হবে।


ইসলামী ব্যাংক যে কারণে গোটা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং যে কারণে ইসলামী ব্যাংক গর্ববোধ করে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হলো:


1. দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া।

2. শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

3. নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করা।

4. কৃষক ও বর্গা চাষীদের অর্থায়ন করা।

5. ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্য ও বহুমুখী কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলা।

6. মধ্যবিত্ত মানুষের ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে আমানতের শক্ত ভিত্তি তৈরি করা।

7. Financial Inclusion বা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সার্থক বাস্তবায়ন করা।


উপরোক্ত সব সেবা শুধুমাত্র আরডিএস বা পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।


**আরডিএস কর্মীদের উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য:**


1. যোগ্যতার দিক থেকে আরডিএস কর্মীদের মধ্যে ডিগ্রি, মাস্টার্স এবং কামিল পাশ অনেকেই আছেন। অনেকের ডিপ্লোমাও রয়েছে।

2. নৈতিকতা ও সততার দিক থেকে তারা উন্নত মানের।

3. কঠোর পরিশ্রমী এবং ব্যাংকের প্রতি নিবেদিত প্রাণ।

4. ব্যাংকের যেকোনো কঠিন সময়ে তারা অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করে।

5. ব্যাংকের ডিপোজিট সংগ্রহ এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তারা সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

6. মূলধারার অফিসাররা যেখানে সকাল ১০টায় অফিস শুরু করেন, সেখানে আরডিএস কর্মীরা ফজরের পর থেকেই তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। ফজরের পরে তারা কেন্দ্র মিটিং করেন, সাইকেল নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনিয়োগ আদায়ের কাজ করেন, তারপর ব্যাংকে এসে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন।

7. ব্যাংকের বিভিন্ন পণ্যের প্রচার এবং প্রসারে তারা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

8. কম্পিউটার পরিচালনা এবং ডিজিটাল কাজকর্মে তারা দক্ষ।


**তাদের বঞ্চনা বা আমাদের দাবি:**


1. পূর্বে তাদের মেইন স্ট্রিমে প্রমোশন পাওয়ার সুযোগ ছিল, যা বর্তমানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি দ্রুত চালু হওয়া প্রয়োজন। তাদেরকে সিনিয়র ফিল্ড অফিসারের পরে ব্যাংকের সাধারণ ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

2. তাদেরকে সাধারণ ক্যাডার বা আরডিএসের নিজস্ব ক্যাডারেও প্রমোশন দেওয়া হয় না।

3. মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে, ১৮, ২০, ২২ বছর চাকরির পরেও তাদের অনেকের প্রমোশন হয়নি।

4. তাদের বেতন ভাতা ও ইনক্রিমেন্টের পরিমাণ খুবই নগণ্য।

5. RDS হিসেবে তাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয় না। অফিসে তাদের বসার স্থান সব জায়গায় সম্মানজনক নয়।

6. তাদের হাউজ বিল্ডিং ফ্যাসিলিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যা দ্রুত চালু হওয়া প্রয়োজন।

7. যেহেতু তারা যুগের পর যুগ প্রমোশন বঞ্চিত, তাই পরিবর্তনের এই সময়ে তাদের সবাইকে একটি প্রমোশন বা উপযুক্ত প্রমোশন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একটি গণ প্রমোশন দিলে ব্যাংকের খুব বেশি ক্ষতি হবে না, বরং তাদের জন্য এটি কিছুটা ন্যায়বিচার হবে।

8. ইসলামী ব্যাংকে যাদের উপর সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে এবং যারা সবচেয়ে বেশি মজলুম, তারাই হল আরডিএস-এর জনশক্তি। আমি তাদের কান্না, চোখের পানি, দীর্ঘশ্বাস এবং চরম হতাশা দেখেছি।


মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলার আকাশে ঘন কালো মেঘ কেটে গিয়েছে, ১৮ কোটি মানুষের মাথার উপর থেকে জগদ্দল পাথর সরে গিয়েছে। এই সময়ে একটি ইনসাফের ব্যাংক, একটি মানবিক ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের কাছে আশা করি আরডিএস-এর নিরীহ এবং মজলুম কর্মকর্তাদের প্রতি সদয় হবেন, দায়িত্বশীল হবেন এবং ন্যায়বিচার করবেন। আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন। আমিন।

Post a Comment

0 Comments