"ইসলামী ব্যাংকের ৫০ হাজার কোটি টাকা এস আলমের পকেটে চলে গেছে।"

 "ইসলামী ব্যাংকের ৫০ হাজার কোটি টাকা এস আলমের পকেটে চলে গেছে।"

"মাত্র দশ বছর আগে দেশের শীর্ষ ব্যাংক ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। আইনকানুন মেনে চলা, গ্রাহক সেবা দেওয়া এবং আর্থিক সূচকে অন্যান্য সব ব্যাংককে ছাপিয়ে গিয়েছিল এই ব্যাংক। গ্রাহকদের আস্থার কারণে এটি স্থানীয় আমানত ও বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল। ব্যাংকটির আকার এতটাই বড় হয়ে উঠেছিল যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হতো—ইসলামী ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়লে পুরো খাতে ‘পদ্ধতিগত ঝুঁকি’ তৈরি হবে, যা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না।


তবে ২০১৭ সাল থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ওই বছর সরকার ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ হিসেবে এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ। এরপর সাড়ে সাত বছরে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নেয় এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ। টাকা বের করার সময় কোনো নিয়ম-কানুন মানা হয়নি, এবং ঋণের তথ্য অনুযায়ী, পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ বেশি বলেই কর্মকর্তারা মনে করছেন।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তাঁর পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের নামে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান খুলে ঋণ হিসেবে অর্থ বের করা হয়েছে। প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের মতো বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ বের করার কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। এখন এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম, এবং আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। পি কে হালদার ছিলেন এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন আভিভা ফাইন্যান্স ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।

f ff

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা যাচ্ছে না, ফলে ব্যাংকটি তারল্য সংকটে ভুগছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাহিদামতো তারল্য জমা রাখতে না পারায় প্রতিদিন জরিমানা দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদ্য সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার নিজের বিশেষ ক্ষমতাবলে ‘টাকা ছাপিয়ে’ দেড় বছর ধরে ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, কিন্তু ব্যাংকটির খারাপ অবস্থার জন্য দায়ী কাউকে এখনও শাস্তি দেওয়া হয়নি।

এস আলম গ্রুপ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আসার পর ব্যাংকটিতে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই সাইফুল আলমের পটিয়া উপজেলার। ফলে ব্যাংকটির অর্ধেক কর্মকর্তাই এখন পটিয়ার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০১৭ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া পুরোনো কর্মকর্তারা ব্যাংকটিকে ‘এস আলম ও পটিয়ামুক্ত’ করতে আন্দোলন শুরু করেছেন। এর মধ্যে বিবদমান দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গুলির ঘটনা ঘটেছে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকটি খেয়ে ফেলার জন্য এস আলম গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তারা সেই কাজই করেছে, ব্যাংকটি ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্যাংকের টাকা এখন বিদেশে চলে গেছে। এখন এস আলম গ্রুপ ও ঋণগ্রহীতাদের সম্পদ জব্দ করে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে, তবে ঋণের এক-তৃতীয়াংশ টাকাও আদায় হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।'"


Post a Comment

0 Comments