আ.লীগপন্থি শীর্ষ আমলারা এবার দুদকের পর্যবেক্ষণে।

 আ.লীগপন্থি শীর্ষ আমলারা এবার দুদকের পর্যবেক্ষণে।


আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকারের আমলে প্রশাসনের শীর্ষ পদে থাকা কর্মকর্তাদের সম্পদের অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৫ বছরে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তাদের বিষয়ে শিগগিরই অনুসন্ধান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়াটি শুরু হবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবদের সম্পদের তথ্য চেয়ে। এরপর পর্যায়ক্রমে সাবেক জনপ্রশাসন সচিব ও জ্বালানি সচিবদের তদন্ত করা হবে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন আমলার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।



গত ১৫ বছরে সরকারের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়মে জড়িয়েছেন অনেক আমলা। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলেও বিভিন্ন মহলের চাপের কারণে এতদিন দুদক সেগুলো নিয়ে কাজ করতে পারেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, সেসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে, দুদক দীর্ঘদিন ধরে লাল ফিতায় বন্দি থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে।


সূত্র জানায়, গত সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী আমলার বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। চাকরি জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন নেওয়াসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তারা। অবৈধ অর্থে তারা দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে, বিভিন্ন কোম্পানিতে বিপুল পরিমাণ শেয়ার এবং জমি রয়েছে। এসব সম্পদের বেশিরভাগই তাদের স্ত্রী, সন্তান বা আত্মীয়স্বজনের নামে। কেউ কেউ চাকরি শেষে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন, আবার কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, কেউবা দেশ ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে।


দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে ফাইলবন্দি ছিল এবং সরকারের ওপর মহলের চাপের কারণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন ক্ষমতার পালাবদলের পর, দুদক সেসব ফাইল নিয়ে সক্রিয় হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে সব অভিযোগের তদন্ত করা হবে।


দুদকের একজন উপপরিচালক জানান, অনুসন্ধান তালিকায় প্রথমদিকে আছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবরা। এদের অনেকেই বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী ছিলেন এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে এবং শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হবে।


ff f

দুদকের অনুসন্ধানের তালিকায় সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফিউল আলম, মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া এবং এম আবদুল আজিজের নাম রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবদের মধ্যে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ড. আহমদ কায়কাউস, মো. নজিবুর রহমান, ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মো. আবুল কালাম আজাদ, আবদুস সোবাহান সিকদার, শেখ মো. ওয়াহিদ উজ্জামান এবং এম আব্দুল আজিজের সম্পদের খোঁজে দুদক অনুসন্ধান চালাবে।


তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ ও পরিবারের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


এছাড়া, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার সময়ে পদ্মা সেতুসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।


দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন জানান, "যে-ই দুর্নীতিবাজ হোক না কেন, দুর্নীতি দমন আইনের তফশিলভুক্ত অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গেলে সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে চার্জশিট দেওয়া হবে এবং কোর্টে মামলা দাখিল করা হবে। দুর্নীতিবাজদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।"

Post a Comment

0 Comments