সড়কে বিলাসবহুল গাড়ির চলাচল হ্রাস পেয়েছে।

 সড়কে বিলাসবহুল গাড়ির চলাচল হ্রাস পেয়েছে।


 প্রায় পনেরো দিন আগে ঢাকার সড়ক-মহাসড়কে মার্সিডিজ-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, রেঞ্জ রোভার, অডি, প্রাডো, হ্যারিয়ার, টয়োটা করোলা ক্রসসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ির উপস্থিতি দেখা যেত। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও এই ধরনের বিলাসবহুল গাড়ি প্রচুর পরিমাণে চলাচল করত। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এ দৃশ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, যারা এই গাড়িগুলো চালাতেন, তাদের অনেকেই সরকার পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন, যার ফলে রাস্তায় বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে।

গাড়ি ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্রের মতে, বিলাসবহুল গাড়ির ক্রেতাদের বড় একটি অংশ ছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী, সাবেক ও বর্তমান আমলা এবং সরকারের আনুকূল্যপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী। সরকার পতনের পর তাদের অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন, এবং কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছেন। এর ফলে তাদের ব্যবহৃত বিলাসবহুল গাড়িগুলো এখন আর রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না।


যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে মার্সিডিজ-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, রেঞ্জ রোভার, অডি এবং অন্যান্য বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু গত দুই সপ্তাহে এ ধরনের গাড়ির উপস্থিতি রাস্তায় প্রায় অনুপস্থিত। বিশেষজ্ঞ ও পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় দেশে ঘটে যাওয়া ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো এই পরিস্থিতিতে ভূমিকা রেখেছে। এ সময় অনেকেই তাদের গাড়ি বের করেননি, এবং যারা সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতারাও ছিলেন, তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচারের আওতায় আসার আশঙ্কায় রয়েছেন, তাই আত্মগোপনে রয়েছেন।

fff

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, এ সব কারণেই রাস্তায় বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা কমে যাওয়া একটি বড় কারণ হতে পারে।


এনবিআরের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে প্রধানত মার্সিডিজ-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, রেঞ্জ রোভার এবং অডি ব্র্যান্ডের গাড়ি রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে এই চারটি ব্র্যান্ডের গাড়ি আমদানি হয়েছে ২৪৮টি, যার মধ্যে ৫১টি গাড়ির বাজারমূল্য (শুল্ক-করসহ) ৪ কোটি টাকার চেয়ে বেশি।


গত দেড় দশকে বিলাসবহুল গাড়ির পাশাপাশি দেশে এসইউভি বা জিপ শ্রেণীর গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে নিবন্ধিত জিপ শ্রেণীর গাড়ির সংখ্যা ৯৫ হাজার ১৫০, যার মধ্যে ৬৭ হাজারের নিবন্ধন হয়েছে ২০১০ সালের পর। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের গাড়ির সংখ্যা রাস্তায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

fff

গাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে গাড়ি আমদানির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বাজারে মন্দা ভাব আনতে শুরু করে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিলাসবহুল গাড়ির চাহিদা ও ক্রেতার সংখ্যা ছিল বাড়তির দিকে, কিন্তু ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর অনেকেই এই গাড়িগুলো ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছেন।


২০২০ সালের কভিড মহামারী বাদ দিলে গত এক দশকে ধারাবাহিকভাবে দেশের গাড়ির বাজার বড় হয়েছে। ২০২২ সালে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ সত্ত্বেও দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গাড়ি নিবন্ধন হয়েছিল, তবে ২০২৩ সালে এ সংখ্যা কমে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে চলে আসে।

Post a Comment

0 Comments