আকিজ এস আলমের হয়ে ব্যাংকের টাকা লুটের পরিকল্পনা করেন।
২০০৯ সালে ডিগ্রি পাস করার পর আকিজ উদ্দিন এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রটোকল অফিসার (পিএস) হন। চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, মাত্র ১৪ বছরের ব্যবধানে অস্বাভাবিকভাবে পদোন্নতি পেয়ে ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে আসীন হন। অথচ সাধারণত একজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে ডিএমডি পদে আসতে হলে ২৪-২৬ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে। এভাবে আকিজ উদ্দিনের হাতে ব্যাংকিং সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে।
গুঞ্জন রয়েছে যে, হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আকিজ উদ্দিন ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে অল্প সময়ে প্রচুর সম্পদ, ফ্ল্যাট, প্লট, এবং দেশ-বিদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের দাবি, আকিজ উদ্দিন ২০১২ সালে প্রটোকল অফিসারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ব্যাংকের টাকা লুটের নানা পরিকল্পনা করেন। যদিও ইসলামী ব্যাংকের ১১ জন ব্যবস্থাপক থাকলেও, ব্যাংকের সার্বিক পরিচালনায় প্রভাব বিস্তার করেন ডিএমডি আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিন এবং মোহাম্মদ সাব্বির। তারা ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন, আর অন্যরা শুধু রুটিন কাজ করেন।
একটি অভিযোগে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট আকিজ উদ্দিন ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮৮৯ কোটি টাকা বেনামি ঋণের মাধ্যমে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ব্যাংক কর্মকর্তাদের তৎপরতায় এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এই ঋণ তুলে নেয়ার চেষ্টা আকিজ উদ্দিনের মালিকানাধীন ‘গোল্ডেন স্টার’ ও ‘টপ টেন ট্রেডিং হাউজ’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হয়েছিল।
ff f
অনুসন্ধানে জানা যায়, আকিজ উদ্দিন তার দায়িত্বে থেকে বিভিন্ন কোম্পানির নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন এবং এস আলমের অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও তিনি ব্যাংকে প্রভাব খাটিয়ে নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ নিতেন এবং পুরনো কর্মীদের জোরপূর্বক অবসর নিতে বাধ্য করতেন।
আকিজ উদ্দিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি পদে যোগদানের পর তার শিক্ষাগত প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হলেও, স্নাতক বা অন্য কোনো ডিগ্রি সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
আকিজ উদ্দিনের সম্পদের পরিমাণও বিস্ময়কর। অভিযোগ আছে যে, তিনি দুবাইতে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, যার মধ্যে দুটি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। এছাড়াও ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট এবং মূল্যবান সম্পদ তার দখলে রয়েছে।
f ff
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ৮-৯টি ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ আকিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার সাহস রাখে না। তিনি এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে ফান্ড বের করে তার নিজের আয়ত্তে নিয়ে ব্যবহার করতেন।
এভাবে ব্যাংকিং সেক্টরে তার বিপুল প্রভাব এবং সম্পদের পাহাড় গড়ে ওঠে, যা দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য একটি অস্বস্তিকর এবং উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

0 Comments