যেখানেই দুর্বৃত্তপনা, সেখানেই প্রতিরোধ করতে হবে: জামায়াতের আমির
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির শফিকুর রহমান অভিযোগ করেছেন যে একটি সুবিধাবাদী দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী বিভিন্ন স্থানে সরকারি স্থাপনা, প্রতিপক্ষের বাড়ি এবং কিছু সংখ্যালঘু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “গতকাল আমরা জাতিকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছি এবং আজও আহ্বান জানাচ্ছি, যে কোনও ধরনের দুর্বৃত্তপনা দেখলেই তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, বিদ্যমান প্রশাসনকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেব।”
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, “গতকাল একটি ‘পরিবর্তন’ ঘটেছে, যা অনেক মানুষের জীবনহানির কারণ হয়েছে। আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ করছি যে, এই পরিবর্তনের উষালগ্নে একটি সুবিধাবাদী দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি স্থাপনাগুলি, প্রতিপক্ষের বাড়ি এবং কিছু সংখ্যালঘু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আঘাত করছে। কোথাও ভাঙচুর, কোথাও লুটপাট, এবং কোথাও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। যাদের অন্তরে বিবেক ও মানবতা আছে, তারা এসব করতে পারে না।”
শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যেখানেই মানুষের বিপদের আশঙ্কা আছে, সেখানেই তারা পাহারাদারের ভূমিকা পালন করবেন।
তিনি দাবি করেন, যারা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। “এই দেশে কোথাও দুর্বৃত্তরা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে থাকলে, তা প্রতিরোধ করতে হবে। জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে। যারা ইতিমধ্যে এসব কাজ করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”
জামায়াতের আমির বলেন, “যে কেউ বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, সে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। এখানে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু এমন কোনো বিভাজন নেই। আমাদের কাছে এসব দুর্বৃত্তপনা মানবতাবিরোধী কাজ মনে হয়। জাতিকে আহ্বান জানাচ্ছি, যেখানেই দুর্বৃত্তপনা দেখবেন, তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ করুন। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, বিদ্যমান প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেব।”
সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছে, এই প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, “যারা আমাদের নিষিদ্ধ করেছে, সেই সরকারই... এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাই না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন, জামায়াত এর সমর্থন করে কিনা জানতে চাইলে শফিকুর রহমান বলেন, “ছাত্রদের সম্মান করি, তাদের ত্যাগের ফলস্বরূপ আজকের পরিবর্তন হয়েছে। তাদের এই ধরনের প্রস্তাব দেয়ার অধিকার আছে, তবে আমাদের সাথে সম্মতি নিয়ে বলতে হবে।”
শফিকুর রহমান দেশে সংকট উত্তরণের জন্য অতি দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে, শফিকুর রহমান জানান, গত রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে।
২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় ১৩ বছর পর আজ দলের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।
এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, আবদুল হালিম, মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম, উত্তরের আমির সেলিমউদ্দিন, দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি রেজাউল করিমসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
0 Comments