চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে এখনো মরিয়া আওয়ামী লীগ, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাতে কান দিচ্ছেন না।

 চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে এখনো মরিয়া আওয়ামী লীগ, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাতে কান দিচ্ছেন না।


আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এখনো চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া। ছাত্র-জনতার ভয়ে সরাসরি চাঁদা তুলতে না পারলেও, তারা বিভিন্ন উপায়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়ার চেষ্টা করছে। অভিযোগ রয়েছে যে, ঢাকা উত্তরের মিরপুর, পল্লবী, কালসী, গাবতলী, শ্যামলী, এবং কল্যাণপুর এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। এসব এলাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন যুবলীগের সেক্রেটারি ও সাবেক সংসদ সদস্য ময়নুল হোসেন নিখিল। ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন এলাকা নিখিলের চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল।


তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর নিখিল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধানরা আত্মগোপন করেন। তাদের অনুসারীরাও লুকিয়ে আছে। এতে করে বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা চাঁদামুক্তভাবে ব্যবসা শুরু করেন। সম্প্রতি, নিখিলের কিছু অনুসারী মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যারা এসব এলাকায় নিয়মিত চাঁদা তুলতেন, তাদের মধ্যে কিছু পরিচিত মুখ এখন বিভিন্নভাবে সংকেত দেয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাদের পাত্তা দিচ্ছেন না।


গতকাল কয়েক দিন ধরে মিরপুরসহ ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে শুরু করে ২ নম্বর পর্যন্ত রাস্তার পাশে রয়েছে ছোট-বড় কয়েক শত দোকান। এছাড়া, মিরপুর-১, দারুস সালাম, গাবতলী হয়ে বেড়িবাঁধ রূপনগর এলাকাসহ আশপাশে রয়েছে কয়েক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব এলাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে ডিশ লাইন, ইন্টারনেট ব্যবসাসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকেই কয়েক ভাগে চাঁদা তোলা হতো। চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক যুবলীগ সেক্রেটারি ময়নুল হোসেন নিখিল পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করতেন। তিনি নির্ধারণ করতেন কোন এলাকায়, কোন সেক্টরের চাঁদা কে তুলবে, সেই অনুযায়ী একজনকে প্রধান করা হতো এবং তার নিয়ন্ত্রণে অন্যরা থাকত।

fff f

মিরপুর-২-এর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, তিনি গত ১২ বছর ধরে কাপড়ের ব্যবসা করছেন। বিক্রি না হলেও প্রতিদিন বিভিন্ন বাহিনীকে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা চাঁদা দিতে হতো। কিন্তু এখন আর কাউকে চাঁদা দিতে হয় না। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যারা চাঁদা নিতো, তারা সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। তবে ১০ আগস্টের দিকে স্থানীয় যুবদল এবং ছাত্রদলের নেতারা পরিচিত হতে আসেন। তারা চাঁদা দাবি না করলেও নিখিলের বাহিনীর সদস্যরা আবারও ঘোরাঘুরি শুরু করেছে এবং ইনিয়ে-বিনিয়ে টাকা দাবি করছে।


অপর এক ব্যবসায়ী, মিলন বলেন, আগের এক লাইনম্যান তাকে অভয় দিয়ে বলেছেন, "কাউকে কোনো চাঁদা দিবা না, আমরা আছি তো, আমরা তোমাদের শেল্টার দিবো।"


এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে চাঁদামুক্তভাবে ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। আগে যেভাবে বাধ্যতামূলক চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হতো, এখন সেটি নেই। তবে কেউ যদি আগের মতো কর্মকাণ্ড করতে চায়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

Post a Comment

0 Comments