যারা উচ্চ শিক্ষার মান নষ্ট করেছেন।

 যারা উচ্চ শিক্ষার মান নষ্ট করেছেন।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রে রয়েছে। বিগত কয়েক দশকে দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিশেষ করে গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই সংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে দেশে ৫৩টি সরকারি এবং ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।


তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ উচ্চ পর্যায়ের নিয়োগে একাডেমিক যোগ্যতার পরিবর্তে দলীয় আনুগত্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের খুশি করে পদ বাগানোর অভিযোগও উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরেও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যেমন নিয়োগে অনিয়ম ও অবকাঠামোগত দুর্নীতি। শিক্ষার মানহীনতা এবং গবেষণায় অনিয়মের কারণে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন যে, গত দেড় দশকে দেশে উচ্চ শিক্ষার মান উন্নত না হয়ে বরং অবনমন হয়েছে। 

উচ্চ শিক্ষার মানের এই অবনমনের জন্য দেশের শিক্ষা খাতের নীতিনির্ধারক, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী শিক্ষকদের প্রধান দায়ী মনে করা হয়। বিশেষ করে নুরুল ইসলাম নাহিদ, যিনি নবম ও দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তার মেয়াদকালে (২০০৯-২০১৮) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগে দলীয়করণ এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ব্যাপকভাবে উঠেছে। তার সময়ে নিয়োগে অনিয়মের ঘটনা বেড়ে যায় এবং বেশ কয়েকটি নিয়োগে সরাসরি তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।


নাহিদের পরবর্তী মন্ত্রী ডা. দীপু মনির সময়েও নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অব্যাহত থাকে। অভিযোগ আছে যে, উপাচার্য নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ করা হতো এবং বিভিন্ন পদের জন্য অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ নিশ্চিত করা হতো। একইভাবে, তার আমলে জমি ক্রয়ের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। তবে, দীপু মনি এই অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছিলেন।


তদুপরি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং অন্যান্য প্রভাবশালী শিক্ষকরা উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমের মান নষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন নিয়োগে মেধার বদলে রাজনৈতিক আনুগত্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য, প্রভাবশালী শিক্ষক এবং নীতিনির্ধারকদের এমন কর্মকাণ্ডের কারণে উচ্চ শিক্ষা খাতের মান এবং শিক্ষার পরিবেশ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

fff

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, "শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজানো উচিত। দলীয় আনুগত্যের পরিবর্তে মেধা, গবেষণা এবং বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বমানের করতে হলে তাদের অভ্যন্তরীণ সংস্কার প্রয়োজন।" 


সর্বোপরি, বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা খাতে বিদ্যমান অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এর মানের অবনমন ঘটেছে। উপযুক্ত সংস্কার ও সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা জরুরি।

 

Post a Comment

0 Comments