এস আলমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ।

  এস আলমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ।


চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছ থেকেই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে, যার একটি বড় অংশ ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে নেয়া হয়েছে।


শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংককে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর প্রায় সাত বছরে নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে গ্রুপটি বিপুল অঙ্কের ঋণ নেয়, যার ফলে ব্যাংকটি তারল্য সংকটে পড়ে।

ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও এস আলম গ্রুপের মালিকানায় আরও পাঁচটি ব্যাংক রয়েছে: সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংক। এসব ব্যাংকেও ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।


এস আলম পরিবার জনতা ব্যাংক থেকেও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। যদিও একক কোনো ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ না দেয়ার নিয়ম রয়েছে, তা মানা হয়নি। নিয়ম ভেঙে গ্রুপটিকে যে ঋণ দেয়া হয়েছে, সেটি ব্যাংকের মোট মূলধনের প্রায় ৪২০ শতাংশ।


গত দেড় দশকে এস আলম গ্রুপ যে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তার একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।


বিদেশে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়, কিন্তু এস আলম গ্রুপের কোনো নাম সেই তালিকায় নেই। এছাড়া, গ্রুপটি গত কয়েক বছরে দেশেও একাধিক বাড়ি ও জমি কিনেছে। শিল্প কারখানার নামে ঋণ নিয়ে সেই টাকা ব্যবহার করে এসব সম্পত্তি গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি শুল্ক ফাঁকিরও অভিযোগ রয়েছে।


এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। 

fff

এস আলমের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম, ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে মনে করেন অনেকে, কারণ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে গ্রুপটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে।


দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। 


এছাড়া, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির তদন্ত করছে এবং ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

fff

এছাড়া, এস আলম পরিবারের হাতে থাকা ছয়টি ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

Post a Comment

0 Comments