কোর্টে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে কিল-ঘুষির ঘটনা, আইনজীবী পাচ্ছেন না।

 কোর্টে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে কিল-ঘুষির ঘটনা, আইনজীবী পাচ্ছেন না।

গত কয়েক দিনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং এমপিকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হয়েছে।


গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন উপদেষ্টা, তিনজন সাবেক মন্ত্রী, দুজন প্রতিমন্ত্রী, সংসদের ডেপুটি স্পিকার, একজন উপমন্ত্রী এবং অন্তত দুজন এমপি।


পুলিশ বলছে, তারা কয়েকজনকে 'গোপন সংবাদের ভিত্তিতে' গ্রেফতার করেছে, তবে তাদের আগে বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ফলে গ্রেফতারের স্থান ও সময় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।


কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনার সরকার এবং আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে সারাদেশে অসংখ্য মামলা হয়েছে।

যারা এখন পর্যন্ত আটক হয়েছেন, তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হচ্ছে।


সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানুষের তীব্র ক্ষোভ আদালত প্রাঙ্গণেও ফুটে উঠছে। কেউ কেউ দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে সেই ক্ষোভ প্রকাশের চেষ্টা করছেন।


মঙ্গলবার, সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি ও উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে আদালতে আনার সময় পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের কিল-ঘুষি মারা হয়। দীপু মনিকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।


ওই দিন, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মামলায় বিশেষত নারীদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবিও জানায়।


অন্যদিকে, গ্রেফতার হওয়া সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলাগুলোতে অভিযোগ প্রমাণ করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা কঠিন হতে পারে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন। কারণ, এসব মামলায় স্পষ্টভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই এবং অনেক ক্ষেত্রে আসামি হিসেবে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করা হয়েছে।


আদালতে তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকার বিষয়টিও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

fff

পূর্বের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও আদালত প্রাঙ্গণে হামলা এবং মামলার ক্ষেত্রে একই ধরনের অসঙ্গতি দেখা গিয়েছিল। এখন এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ রয়ে যাবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।


সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এই ঘটনাকে ‘মব জাস্টিস’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, "ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং মব জাস্টিস এক নয়। দু'টি বিষয়কে আলাদা করতে হবে।"


তিনি আরও বলেন, "আদালত প্রাঙ্গণে মব জাস্টিস কেন? যদি নিরাপত্তা দিতে না পারেন, তাহলে অন্য ব্যবস্থা নিয়ে তাদের কোর্টে হাজির করুন।"


সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, "ওপেন কোর্টে এভাবে আসামিকে আনা ঠিক হচ্ছে কিনা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। এখানে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও থাকতে পারে।"


তিনি মন্তব্য করেন যে, এমন পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা দরকার।


আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, "শারীরিক আক্রমণে জড়িত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে পেশাগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।"


এ বিষয়টি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামানও। তিনি বলেন, "ক্ষোভ থাকতে পারে, কিন্তু ক্ষোভের প্রকাশ এমন পর্যায়ে হওয়া উচিত নয়, যা ন্যায়বিচারকে ব্যাহত করে।"


আওয়ামী লীগের নেতাদের আটক ও মামলাগুলোতে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায়, এসব মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে। 


সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, "তদন্তকারীরা যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে পারেন, তবে মামলাগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। অন্যথায়, অভিযোগের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাবে।"

fff

বিগত সরকারের সময়ে এমন ঘটনা ঘটেছিল বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, "পরিস্থিতি এখন যে দিকে যাচ্ছে, তা যদি তদন্ত পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে পরবর্তীতে বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে।"


গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দলটির বেশিরভাগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পরদিনই বিমানবন্দর থেকে কয়েকজনকে আটকের খবর আসে।


পুলিশের সূত্র মতে, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 


পরদিন রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকা থেকে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে আটক করা হয়।


শুক্রবার ঠাকুরগাঁও থেকে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনকে গ্রেফতার করা হয়।


সোমবার রাতে বারিধারা এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনিকে আটক করা হয়। একই রাতে সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কেও গ্রেফতার করা হয়।

ff f

মঙ্গলবার রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) এ বি তাজুল ইসলামকে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। একই এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আহমদ হোসেনকে।


সেদিনই কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকা থেকে গ্রেফতারের খবর আসে।

 

Post a Comment

0 Comments