**বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ালেন আমীর জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান**

 **বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ালেন আমীর জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান**


টানা ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভারত থেকে আসা আকস্মিক বন্যার কারণে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ার ফলে এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ভারত সরকার বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে পানিতে ডুবিয়ে মারার ব্যবস্থা করেছে। এই বন্যায় এলাকাগুলোর বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু পানিতে তলিয়ে গেছে এবং অর্ধকোটি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মাছের ঘের, জমির ফসল, সবজি, ফলের বাগান পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি বানের পানিতে ভেসে গেছে। গৃহপালিত পশু-পাখি রাখার জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু কিছু এলাকায় বন্যার পানি ঘরের ছাদ ও টিনের চাল ছুঁয়ে ফেলেছে। ফলে, লক্ষ লক্ষ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বানভাসী মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, “আমরা শুনে আসছি, প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কথিত বন্ধু ভারত ফারাক্কাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। ভারত শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রাখে এবং বর্ষার মৌসুমে একসঙ্গে সব গেট খুলে দেয়। গ্রীষ্মে যখন আমাদের পানির প্রয়োজন হয়, তখন তারা আমাদেরকে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারে, এবং বর্ষায় যখন পানির প্রয়োজন নেই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে বন্যায় ভাসিয়ে দেয়। ভারতের এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ডে আমরা হতবাক। প্রশ্ন জাগে, ভারত কেমন বন্ধু!”


তিনি আরও বলেন, “আমাদের একটি সরকার ছিল, সাড়ে ১৫ বছর। তারা বলতো আমাদের দেশকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে ফেলছে। বাস্তবে এসব কথা ছিল মিথ্যা এবং ফাঁকা প্রতিশ্রুতি। তারা জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মানুষ নিজের বাড়িতে পর্দা টানালেও বলতো, এ ঘরে জঙ্গি আছে। তাদের মগজে সবসময়ই জঙ্গির ভাবনা ছিল। কিন্তু আসল জঙ্গি তারাই, যারা মাথায় হেলমেট এবং হাতে লাঠি নিয়ে মানুষের উপর হামলা চালায়। আমাদের ছাত্র, তরুণ ও যুবসমাজ পুলিশের সামনে বুক চেতিয়ে, বুকের মধ্যে গুলি নিয়ে সন্ত্রাসীদের তাড়িয়েছে বাংলার বুক থেকে।"

fff

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, "আমরা এমন একটি পরিবেশ চাই, যেখানে দেশের প্রত্যেক ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে। আফসোসের বিষয়, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান হলেও বিগত ১৬ বছর যাবৎ তাদের সংখ্যালঘু বানিয়ে রাখা হয়েছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে অন্য সব ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় অনুশাসন নির্বিঘ্নে পালন করতে পেরেছে, কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। ভবিষ্যতে বাংলার মানুষ তা আর হতে দেবে না।"


উপরোক্ত তিন জেলা সফরকালে আমীরে জামায়াত অসহায় বানভাসী মানুষের সাথে কথা বলেন এবং তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেন। তিনি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে আশ্রয়গ্রহণকারী মানুষের মধ্যে খাদ্যপ্যাকেট ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় তিনি সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বানভাসীদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং সবার মঙ্গলের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেন।


ফেনী জেলায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, জেলা আমীর একেএম শামসুদ্দিন, জেলা সেক্রেটারি মুফতি আব্দুল হান্নানসহ জেলা-উপজেলার সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। লক্ষ্মীপুরে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা দ্বীন মোহাম্মদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিন ভুইয়া এবং অন্যান্য নেতাকর্মী।

ff f

নোয়াখালী জেলা আমীর জনাব ইসহাক খন্দকারের সভাপতিত্বে জেলার সবকটি উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।


উল্লেখ্য, নোয়াখালী জেলায় জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে প্রায় ৫ হাজার বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, খাবার স্যালাইনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করা হয়।

Post a Comment

0 Comments